সংসদের বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে শীর্ষ বিজেপি নেতাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ এবং 'অপারেশন সিন্দুর' নিয়ে আলোচনা করা হয়। অমিত শাহ, রাজনাথ সিং এবং নির্মলা সীতারামন সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এই বৈঠকে অংশ নেন।
নয়াদিল্লি: সংসদের বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ভারতীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য দেখা যায়, যখন সংসদ ভবনে শীর্ষ বিজেপি নেতাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সময় এবং প্রেক্ষাপট এটিকে বিশেষ করে তোলে — একদিকে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ, অন্যদিকে সংসদে 'অপারেশন সিন্দুর' নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা।
বৈঠকের আগে তৎপরতা বৃদ্ধি
সকালে সংসদীয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে থেকেই সংসদ ভবনের করিডোরে অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এই বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়াও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের উপস্থিতি বৈঠকের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগের ফলে সৃষ্ট সাংবিধানিক সংকট এবং সংসদে 'অপারেশন সিন্দুর' নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণাত্মক অবস্থানের মোকাবিলা করার কৌশল নির্ধারণ করা।
ধনখড়ের পদত্যাগ: স্বাস্থ্যজনিত কারণ নাকি কৌশলগত সংকেত?
জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগের খবরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যজনিত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং এখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিরতি নিতে চান। কয়েক দিন আগে নৈনিতাল সফরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তাঁর পরিবার তাঁকে স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেয়। ধনখড় সোমবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন। জানা গেছে, তিনি রাজ্যসভায় যাবেন না বা বিদায়ী ভাষণও দেবেন না। তিনি সকল সংসদ সদস্যকে তাঁদের স্নেহ ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে, বিরোধী দল এবং কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটিকে একটি গভীর রাজনৈতিক চাল হিসেবে দেখছেন।
'অপারেশন সিন্দুর': সংসদে রাজনৈতিক ঝড় অনিবার্য
'অপারেশন সিন্দুর' সংসদের বাদল অধিবেশনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক অভিযান এবং পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে এই অভিযান সম্পর্কে তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ করেছে, যা সাংবিধানিক পদ্ধতির লঙ্ঘন। সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এটি নিয়ে লোকসভায় ১৬ ঘণ্টা আলোচনা হবে। বিরোধীরা দাবি করছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিজেই এই বিষয়ে জবাব দিতে হবে। মনে করা হচ্ছে এই আলোচনা সংসদে সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা হতে পারে।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের মধ্যে কৌশল
সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে এই আলোচনা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেলেও উভয় পক্ষই এই সুযোগের রাজনৈতিক সুবিধা নিতে কৌশল গ্রহণে ব্যস্ত। সরকার এটিকে 'সাহসী ও সফল সামরিক পদক্ষেপ' হিসেবে তুলে ধরে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে, সেখানে বিরোধীরা এর গোপনীয়তা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভায় রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হলে সংসদকে এ বিষয়ে জানানো উচিত ছিল।
ভবিষ্যতের কৌশলের ইঙ্গিত
বিজেপির উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকটি শুধুমাত্র বর্তমান সংকট মোকাবিলা নয়, আগামী রাজনৈতিক কৌশলের প্রস্তুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কিছু সূত্রের মতে, বিজেপি ধনখড়ের পদত্যাগের কারণে উপরাষ্ট্রপতির শূন্য পদে একটি নতুন মুখ আনতে চায়, যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকনির্দেশনা দিতে পারে। অন্যদিকে, বিজেপি 'অপারেশন সিন্দুর' নিয়ে দেশের মধ্যে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগানোর চেষ্টা করতে পারে। এই বৈঠকে বিরোধীদের সমালোচনার জোরালো জবাব দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কথিত 'সাহসী পদক্ষেপ'-এর বার্তা জনগণের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়।
বিরোধী দলের কৌশল এবং বিজেপির পাল্টা
বিরোধী দলের পরিকল্পনা হল 'অপারেশন সিন্দুর', বিহার ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলিতে এই অধিবেশনে সরকারকে কোণঠাসা করা। এর প্রতিক্রিয়ায়, বিজেপি তার সিনিয়র সাংসদদের সংসদে দায়িত্ব নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। সূত্রের খবর, বিজেপি এখন আবার 'মোদী বনাম বিরোধী' ন্যারেটিভকে আরও তীব্র করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে 'অপারেশন সিন্দুর' একটি প্রধান জাতীয়তাবাদী যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।