মিথিলা বিবাহের অনন্য প্রথা: ভখরা সিঁদুর ও তার সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

মিথিলা বিবাহের অনন্য প্রথা: ভখরা সিঁদুর ও তার সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

মিথিলা অঞ্চলে বিবাহের সময় প্রচলিত ভখরা সিঁদুর প্রথা আজও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক মজবুত অংশ। বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডের অনেক অঞ্চলে বর কনের সিঁথিতে ঘি-এর প্রলেপ লাগিয়ে পাঁচবার ভখরা সিঁদুর পরান। চারদিনব্যাপী মৈথিল বিবাহে এই প্রথাকে সৌভাগ্য, পবিত্রতা এবং অটুট বৈবাহিক বন্ধনের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

মৈথিল বিবাহ প্রথা: মিথিলা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বিবাহ অনুষ্ঠানে ভখরা সিঁদুর প্রথা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, যেখানে বর কনের সিঁথিতে পাঁচবার সিঁদুর পরান। এই অনন্য প্রথা বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন অংশে শত শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। এই প্রথার সময় কনের সিঁথিতে প্রথমে ঘি লাগানো হয় এবং তারপর প্রবীণ মহিলাদের উপস্থিতিতে সিঁদুরদান করা হয়। চারদিনব্যাপী এই বিবাহে চৌঠারী-এর মতো ঐতিহ্য এবং প্রথাগত খাবারও অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা মিথিলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বৈবাহিক বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত করে।

ভখরা সিঁদুর কী?

সাধারণত মানুষ লাল সিঁদুরের সাথে পরিচিত। তবে মিথিলা এবং আশেপাশের অঞ্চলে ভখরা সিঁদুর ব্যবহার করা হয়। এই সিঁদুর সাধারণ সিঁদুর থেকে আলাদা এবং এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়। এটিকে সম্পর্কের পবিত্রতা ও অখণ্ডতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

এই প্রথা কীভাবে পালন করা হয়?

মৈথিল বিবাহে বর কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরানোর আগে একটি বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কনের সিঁথিকে দু'ভাগে ভাগ করা হয় এবং সিঁথিতে ঘি-এর প্রলেপ লাগানো হয়। এরপর বর ভখরা সিঁদুর নিয়ে কনের সিঁথিতে পাঁচবার সিঁদুর পরান। এই সময় পরিবারের মহিলারা কনের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন যাতে অন্য কেউ তাকে দেখতে না পায়। মনে করা হয় যে, এই প্রথা দাম্পত্য জীবনকে অশুভ নজর থেকে রক্ষা করার জন্য পালন করা হয়।

চার দিনব্যাপী বিবাহ অনুষ্ঠান

মৈথিলী ব্রাহ্মণদের বিবাহ অন্যান্য অঞ্চলের মতো এক দিনে সম্পন্ন হয় না। এখানে বিবাহ অনুষ্ঠান চার দিন ধরে চলে। বর বিয়ের দিন থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত কনের বাড়িতেই থাকেন এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী প্রথা পালন করেন। এই সময়কালে বর ও কনে মাটিতে ঘুমান এবং তাদের স্নান করা বারণ থাকে। এই প্রথাকে চৌঠারী বলা হয়।

মিথিলার রাজকীয় খাবার

মৈথিল বিবাহ শুধু প্রথার কারণেই নয়, ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্যও বিশেষ বলে বিবেচিত হয়। এখানে দই চিঁড়ে, বিভিন্ন প্রকার আচার, ছয় থেকে সাত ধরনের সবজি, মাছ, পাকোড়া এবং নরম রসগোল্লা পরিবেশন করা হয়। এই খাবার অতিথিদের বিশেষ আপ্যায়ন হিসাবে বিবেচিত হয় এবং বিবাহকে স্মরণীয় করে তোলে।

সংস্কৃতির মূলের সাথে জড়িত প্রথা

ভখরা সিঁদুরের প্রথা কেবল একটি নিয়ম নয়, বরং শত শত বছর ধরে চলে আসা এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আধুনিক যুগে অনেক জায়গায় আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও, মিথিলার মানুষ এই ঐতিহ্যকে সযত্নে লালন করে চলেছে। এই প্রথা কেবল একটি বিবাহের অংশই নয়, বরং সমাজের প্রাচীন বিশ্বাস এবং সংস্কৃতিরও একটি ঝলক দেখায়।

যদি আপনি ভারতীয় ঐতিহ্যে আগ্রহী হন, তাহলে মিথিলা বিবাহের সিঁদুর প্রথা আপনাকে ভারতীয় সংস্কৃতির গভীরতার সাথে পরিচিত করাবে। এই আঞ্চলিক রীতিনীতিগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভারতের বৈচিত্র্যই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

Leave a comment