সৌম্যশ্রী আত্মদহন: ওড়িশা বনধে স্তব্ধ জনজীবন, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি

সৌম্যশ্রী আত্মদহন: ওড়িশা বনধে স্তব্ধ জনজীবন, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি

সৌম্যশ্রী আত্মদহন কাণ্ডে কংগ্রেস ও বাম দলগুলির ওড়িশা বনধ। রাস্তা অবরোধ, বাজার বন্ধ, ট্রেন স্তব্ধ। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি, জনমানসে ক্ষোভ।

ওড়িশা বনধ প্রতিবাদ: বালেশ্বর জেলার ছাত্রী সৌম্যশ্রী বি.সি.-র আত্মদহন ঘটনা ওড়িশা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঘটনার শিকার ওই ছাত্রী বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোথাও সাহায্য পাননি। এই ঘটনার প্রতিবাদে কংগ্রেস ও বাম দলগুলি (ইন্ডিয়া জোট) বৃহস্পতিবার, ১৭ই জুলাই রাজ্যব্যাপী ওড়িশা বনধের ডাক দেয়। বনধের ব্যাপক প্রভাব দেখা গেছে।

বনধের ব্যাপক প্রভাব, রাস্তায় স্তব্ধতা

ওড়িশা বনধের কারণে জাতীয় সড়ক থেকে শহরের প্রধান রাস্তা, বাজার, দোকান, স্কুল-কলেজ এবং আদালত-কাছারি পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ ছিল। বালেশ্বর, সরো এবং জলেশ্বরের মতো প্রধান স্থানগুলিতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে রাস্তা অবরোধ করে, যার ফলে যান চলাচল ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।

জাতীয় সড়কে গাড়ির লম্বা লাইন

বালেশ্বর জেলার সরো এলাকার উত্তরেশ্বর মোড়ের কাছে জাতীয় সড়ক-১৬ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে হাজার হাজার যানবাহন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে ছিল। স্থানীয় মানুষ ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও জলেশ্বরের লখননাথের কাছেও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, এই গুরুতর ঘটনার একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক।

বালেশ্বর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন অবরোধ

ওড়িশা বনধের প্রভাব রেল যোগাযোগেও পড়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য বালেশ্বর রেলওয়ে স্টেশনে খড়গপুর-খুরদা লোকাল ট্রেনটিকে থামানো হয়। যদিও রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) ইনচার্জ দীপক কুমারের নেতৃত্বে জওয়ানরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ১০ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীদের রেলওয়ে চত্বর থেকে সরিয়ে দেন। এরপর রেল পরিষেবা পুনরায় স্বাভাবিক হয়।

নির্যাতিতার কণ্ঠকে উপেক্ষা করার অভিযোগ

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, সৌম্যশ্রী আত্মদাহের আগে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে বহুবার সাহায্যের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কথা কেউ শোনেনি। তাঁদের মতে, প্রশাসন সময় মতো ব্যবস্থা নিলে এই দুঃখজনক ঘটনাটি এড়ানো যেত। এখন বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেই আসল সত্য সামনে আসতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিবাদ বিক্ষোভ

বালেশ্বরে কংগ্রেস ও বাম দলগুলির বহু নেতা ও কর্মী প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেন। বালেশ্বর জেলা কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জীব গিরি, প্রবীণ নেতা অরুণ জেনা, গৌরাঙ্গ পাণিগ্রাহী, নির্মল নায়ক, গোপীনাথ পাঢ়ি, অর্চনা নন্দী, হেমলতা দাস, বসন্তী নায়ক এবং জশনা সেনাপতি সহ আরও অনেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভের সময় তাঁরা নির্যাতিতাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

জনগণের ক্ষোভ

এই বনধকে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। অনেক স্থানীয় লোক বলেছেন যে, এটি কেবল একজন ছাত্রীর লড়াই নয়, বরং প্রতিটি সেই কণ্ঠের লড়াই যা সিস্টেমের দ্বারা উপেক্ষিত হয়। জনগণের বক্তব্য, যদি ন্যায়বিচার না পাওয়া যায়, তাহলে আগামী দিনগুলিতে আরও বড় আন্দোলন হবে।

ঘটনার পর থেকে রাজ্য সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট বিবৃতি পাওয়া যায়নি। যদিও, প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।

Leave a comment