ভিটামিন হল শরীরের প্রাথমিক জ্বালানি — রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতা, সবকিছুই নির্ভর করে পর্যাপ্ত ভিটামিনের উপস্থিতির উপর। অথচ অজান্তেই অনেকের শরীরে তৈরি হয় ঘাটতি। কখনও অকারণে ক্লান্তি, কখনও চুল পড়া বা হজমের সমস্যা— সবকিছুর পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন উপসর্গ কোন ভিটামিনের অভাবের ইঙ্গিত দেয়।

অবিরাম ক্লান্তি? সতর্ক থাকুন ভিটামিন বি১২ ঘাটতিতে
প্রচুর ঘুমিয়েও সারাদিন অবসন্ন লাগে? এটি হতে পারে ভিটামিন বি১২-এর অভাবের সংকেত। রক্তে অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা কমে গিয়ে ক্লান্তি, ঝিমুনি বা মনোযোগে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
দুর্বল ইমিউনিটি? দায়ী ভিটামিন সি-এর ঘাটতি
প্রায়ই ঠান্ডা-কাশি বা জ্বরে ভোগেন? এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার লক্ষণ, যা সাধারণত ভিটামিন সি-এর অভাবে হয়। কমলালেবু, কিউই বা পেয়ারা খেলে শরীরে ইমিউনিটি ফেরানো যায়।
চুল পড়ছে মুঠো মুঠো? ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিনের ঘাটতি হতে পারে কারণ
হঠাৎ চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত হেয়ার ফল হলে সেটি বায়োটিনের ঘাটতির ফল। এই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণে ডিম, বাদাম, ওটস ও মাছ অত্যন্ত কার্যকর।
ত্বক শুষ্ক বা ফ্যাকাশে? নজর দিন ভিটামিন ই ও আয়রনে
ত্বক শুকিয়ে যাওয়া বা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সাধারণত ভিটামিন ই বা আয়রনের ঘাটতির ফল। ভিটামিন ই ত্বকে আর্দ্রতা ও সুরক্ষা বজায় রাখে, আর আয়রন কমে গেলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা বা জয়েন্ট পেইন? দায়ী ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যায়, যার ফলে গাঁটে ব্যথা, সর্দি-কাশি, এমনকি হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। রোদে থাকা, ডিমের কুসুম ও দুধ খাওয়া এ ক্ষেত্রে উপকারী।
পেশিতে টান বা হাড়ে দুর্বলতা: ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাবের ইঙ্গিত
ঘুমের সময় বা সকালে পেশিতে টান ধরলে সতর্ক হোন। এটি ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সাধারণ লক্ষণ। নিয়মিত শাকসবজি ও কলা খেলে ঘাটতি পূরণ হয়।
রাতে চোখে কম দেখা বা ক্ষত সারতে দেরি: ভিটামিন এ ও সি-এর ঘাটতি
রাতের অন্ধত্ব ভিটামিন এ-এর ঘাটতির ক্লাসিক লক্ষণ। তেমনই ক্ষত সারতে সময় লাগলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন সি ও জিংকের অভাব আছে।

নখ ভঙ্গুর বা মুখে ঘা— বি গ্রুপ ভিটামিনের ঘাটতির ইঙ্গিত
বায়োটিন ও আয়রনের অভাবে নখ ঘন ঘন ভেঙে যায়। আবার ভিটামিন বি২, বি৩ ও বি১২-এর ঘাটতিতে মুখে ঘা হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য? ফাইবার নয়, ভিটামিনের ঘাটতিও দায়ী!
ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার ও কিছু ভিটামিনের অভাবে হজমের গণ্ডগোল ও কনস্টিপেশন হতে পারে। শাকসবজি, দই ও ফল খেলে ধীরে ধীরে উন্নতি হয়।
হাড়ে ব্যথা বা জোড় কমে যাওয়া— সতর্কবার্তা ক্যালসিয়াম ও কে২-এর অভাবে
ভিটামিন ডি থ্রি ও কে২-এর অভাব হলে হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত দুধ, পনির ও রোদে থাকা জরুরি।

ভিটামিনের ঘাটতি শুধু ক্ষণিকের অস্বস্তি নয়, দীর্ঘমেয়াদে বড় রোগের কারণ হতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রঙিন ফল, শাকসবজি, ডিম, দুধ ও মাছ রাখলে প্রাকৃতিকভাবে ঘাটতি রোধ করা যায়। শরীরের এই সূক্ষ্ম সংকেতগুলো উপেক্ষা করবেন না— কারণ সময় মতো সচেতন হওয়াই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।













