ভারত-চিন-আমেরিকা বাণিজ্য টানাপোড়েন কৃষিপণ্যে নতুন সমীকরণ

ভারত-চিন-আমেরিকা বাণিজ্য টানাপোড়েন কৃষিপণ্যে নতুন সমীকরণ

চিনের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে, আর সেই শূন্যস্থান পূরণে ভারতের দরজায় কড়া নাড়ছে আমেরিকা। কিন্তু নয়াদিল্লি কি এত সহজেই মাথা নোয়াবে?

ট্রাম্পের মরিয়া চেষ্টা ও ভারতের অটল অবস্থান

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েও আটকে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের দেশের কৃষিপণ্য, বিশেষত সয়াবিন ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, ভারতীয় বাজারে বিক্রির জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে ভারত তার কৃষকদের স্বার্থে এমন কোনও চুক্তি করতে নারাজ, যা অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ধাক্কা দিতে পারে।ভারতীয় কৃষকের স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি আটকে দিয়েছে নয়াদিল্লি, আর এই অবস্থানেই নড়বড়ে হচ্ছে আমেরিকার কৌশল।

শুল্কযুদ্ধের নতুন অধ্যায়

বাণিজ্য চুক্তি আটকে যাওয়ায় ট্রাম্প ২৫% শুল্ক চাপিয়েছেন ভারতের উপর, পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির উপরও অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেছেন। এই আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের মূল কারণ, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে পড়ায় বিকল্প বাজার হিসেবে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে।চিনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পর ভারতের উপর শুল্ক বাড়িয়ে চাপে রাখার চেষ্টা ট্রাম্পের কৌশল।

চিন-মার্কিন শত্রুতার প্রভাব

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন-চিন সম্পর্কের অবনতি তুঙ্গে। একে অপরের উপর ১০০% পর্যন্ত শুল্ক বসিয়ে রেখেছে দুই দেশ। এর ফলে মার্কিন কৃষিপণ্যের রফতানিতে ভয়াবহ পতন ঘটেছে।শুল্কযুদ্ধের ফলে আমেরিকার কৃষি রফতানিতে ধস, আর তার বড় শিকার সয়াবিন ও ভুট্টা শিল্প।

সংখ্যায় পতনের ছবি

২০২২ সালে আমেরিকা চিনকে ৪০.৭ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য বিক্রি করেছিল। ২০২৪-এ তা নেমে আসে ২৭ বিলিয়নে, আর ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মাত্র ৬.৩৮ বিলিয়ন ডলারে। সয়াবিন রফতানি যেখানে ছিল ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২৫-এ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২.৪৬ বিলিয়নে। ভুট্টা রফতানি তো কার্যত শূন্য।মাত্র তিন বছরে কৃষি রফতানি প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, বাজারে দেখা দিয়েছে গভীর সংকট।

দুটি মূল কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বই মার্কিন পণ্যের পতনের কারণ। বিকল্প বাজার হিসেবে ভারতের প্রতি নজর তাই বাড়ছে।চিনে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায় ও রাজনৈতিক তিক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প বাজার খুঁজতে মরিয়া আমেরিকা।

ভারতের অনমনীয় নীতি

নয়াদিল্লি মার্কিন কৃষিপণ্যের শুল্ক কমাতে রাজি নয়। কঠোর কোয়ারেন্টাইন আইন ও আমদানি নিয়ন্ত্রণও বড় বাধা। কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান স্পষ্ট বলেছেন— কৃষকের স্বার্থে কোনও আপস হবে না।ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় অনড় অবস্থানই চুক্তি আটকে দিচ্ছে।

চিনের বাজার বন্ধ, ভারতের উপর নির্ভরতার খোঁজ

চিন মার্কিন কৃষিপণ্য প্রায় প্রত্যাখ্যান করায়, আমেরিকার নজর ভারতের মতো বৃহৎ ভোক্তা বাজারে। তবে, ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতি এই পথকে দীর্ঘ ও কঠিন করে তুলছে।চিনের দরজা বন্ধ, ভারতের দরজা অল্প খোলা— মার্কিন কৃষিপণ্যের ভবিষ্যৎ তাই অনিশ্চিত।

Leave a comment