বৃহস্পতিবার সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে শমীক ভট্টাচার্যের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের ঘটা করে আয়োজন হলেও, অনুষ্ঠানের মঞ্চে অনুপস্থিত রইলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের বহু প্রভাবশালী নেতা সেখানে হাজির থাকলেও দিলীপকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি! দলীয় রীতি ভেঙে এমন ঘটনা রাজনীতির অন্দরে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কে বা কারা এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অবহেলার জবাব দিলীপের ঠাণ্ডা সুরে, বললেন– ‘দলই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে’
শুক্রবার দিলীপ ঘোষ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, তিনি নিজে থেকে কিছুই চাননি, সবটাই দলের সিদ্ধান্তেই পেয়েছেন। এ কথার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট বোঝালেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মর্মাহত হলেও, দলের প্রতি এখনও তাঁর আনুগত্য অটুট। তিনি বলেন, “দল যদি ডাক দেয়, যাই। না ডাকলে যাই না। সব কিছু দলের উপরেই নির্ভর করছে।” এমন শান্ত অথচ কঠিন বার্তায় অনেক কিছুই বলে দিলেন প্রাক্তন সভাপতি।
দলের দেওয়া সম্মানেই গর্বিত দিলীপ, দাবি করলেন— একটিও পদ নিজে চাননি
বিজেপির রাজনীতিতে তাঁর উত্থান যে নিছক কাকতালীয় নয়, বরং দলের পরিকল্পনার ফল, তা মনে করিয়ে দিলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “দল চাইলে আমি সাধারণ কর্মী হিসেবেও কাজ করব।” এরই মধ্যে তুলে ধরেন, গাড়ি থেকে সিকিউরিটি— সবটাই দলের সৌজন্য। এতদিন যাঁকে রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চতুর্থ স্তম্ভ বলা হতো, তিনিই যেন এখন একা। তবুও ক্ষোভ বা অভিমান নয়, বরং তাঁর বার্তা— তিনি যে দলের অনুগত, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
সুকান্ত হাঁটলেন 'দলীয় লাইনেই', মন্তব্য করেই উসকে দিলেন আরও আলোচনা
বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশনের সমাবর্তনে হাজির হয়ে সুকান্ত মজুমদার জানান, “দিলীপবাবু আমাদের নেতা, তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব।” এই বক্তব্যে যেমন দিলীপ ঘোষের গুরুত্ব অস্বীকার করা হয়নি, তেমনই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়েও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে— এখন সবটাই দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের 'দূরত্ব রেখে স্বীকৃতি' আসলে দিলীপ ঘোষকে ‘বাইরে’ রাখার সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
তৃণমূলের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক স্বীকার, কিন্তু ‘সমীকরণ বদলের’ রাজনীতি পছন্দ নয় দিলীপের
তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ ঘোষ সোজাসুজি বলেন, “দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু আমি কাল শত্রু, আজ বন্ধু— এই মানসিকতায় রাজনীতি করি না।” রাজনৈতিক সৌজন্য আর আদর্শগত ফারাক— এই বার্তায় যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন তিনি। একদিকে পুরনো সম্পর্কের স্বীকৃতি, অন্যদিকে নিজের রাজনৈতিক সততার ঘোষণাও সুনির্দিষ্টভাবে রাখলেন।
চমক’ শব্দটা আজও দিলীপ-চর্চার কেন্দ্রে, নিজেই বললেন— ‘মার্কেটে আমি আছি’
সাংবাদিকরা যখন জানতে চাইলেন, আগামী দিনে দিলীপ ঘোষের তরফে কোনও ‘চমক’ আছে কি না, হাসিমুখে দিলীপ বলেন, “কল্পনা করতে তো পয়সা লাগে না! অনেকেই করছে। মার্কেটে দিলীপ ঘোষ আছেন, কল্পনাও আছে।” রাজনীতির বাজারে তিনি যে এখনও ‘প্রাসঙ্গিক’, তা নিজেই যেন মনে করিয়ে দিলেন বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতা।
মমতার সঙ্গে দিঘায় সাক্ষাৎ! সৌজন্য না কি 'ভবিষ্যতের রাস্তা'?
বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে দিঘায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দিলীপ ঘোষ। যদিও এটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, বিজেপির অন্দরে তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে— এটা কি নিছক সৌজন্য, না কি আসন্ন ভাঙনের ইঙ্গিত? দিলীপ ঘোষ নিজে কখনও এই সাক্ষাৎ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি, তবে এর পর থেকেই তাঁকে দলীয় কার্যক্রমে একপ্রকার 'অদৃশ্য' অবস্থানে দেখা যাচ্ছে।
দলীয় কাজ থেকে সরে, সভাপতির অভ্যর্থনায়ও অনুপস্থিত— জল কতটা গড়াল?
নতুন সভাপতির অভিনন্দন সভায় দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি এখন বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম চর্চার বিষয়। একের পর এক কর্মসূচি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘটনা একদিকে যেমন তাঁর অসন্তোষকে স্পষ্ট করছে, অন্যদিকে প্রশ্ন তুলছে— তিনি কি সত্যিই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছেন? বঙ্গ রাজনীতির রাজপথে এখন একটাই গুঞ্জন— 'দিলীপ ঘোষ কোন পথে হাঁটছেন?