হেমন্ত কান্ডেলওয়ালকে মধ্যপ্রদেশ বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর সামনে মিশন ২০২৮, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং বিরোধী দলের কৌশলগুলির জবাব দেওয়ার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
MP: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হেমন্ত কান্ডেলওয়ালকে, যিনি বৈতুল থেকে বিধায়ক, মধ্যপ্রদেশের নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এই নিয়োগ এমন একটা সময়ে হয়েছে যখন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। হেমন্ত কান্ডেলওয়ালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মিশন ২০২৮, অর্থাৎ আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করা। এছাড়াও, দলে ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কর্মী ও নেতাদের একত্রিত রাখা তাঁর কার্যকালের প্রধান অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম হবে।
বিজেপির ঐতিহ্য অনুযায়ী অপ্রত্যাশিত নাম
মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সবসময় শেষ মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত নামের ঘোষণা করে থাকে। এবারও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে দল বিধায়ক হেমন্ত কান্ডেলওয়ালকে রাজ্যের দায়িত্ব দিয়েছে। কান্ডেলওয়াল এই সুযোগটি পেয়েছেন এমন সময়ে যখন দল রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে, তবে এর অর্থ এই নয় যে তাঁর পথ সহজ হবে।
শৃঙ্খলা এবং ঐক্যের চ্যালেঞ্জ
কান্ডেলওয়ালকে এমন সময়ে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যখন দলে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সামনে আসছে। প্রবীণ নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্য দলের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, কান্ডেলওয়ালকে পুরনো এবং নতুন নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, দলের লক্ষ্যগুলির প্রতি সকলকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাখতে হবে।
আরএসএস এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন
হেমন্ত কান্ডেলওয়াল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং মুখ্যমন্ত্রী ড. মোহন যাদবের সমর্থন পেয়েছেন। এর ফলে একদিকে যেমন তিনি কাজ করার স্বাধীনতা পেতে পারেন, তেমনই অন্যদিকে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশাও বেশি থাকবে। তিনি যদি তাঁর কার্যকালে এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন, তবে এটি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করার সুযোগ হতে পারে।
রাজনৈতিক নিয়োগ থেকে পরীক্ষার শুরু
কান্ডেলওয়ালের আসল পরীক্ষা শুরু হবে যখন নিগম, মন্ডল, বোর্ড এবং দীনদয়াল অন্ত্যোদয় সমিতিগুলিতে রাজনৈতিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সিদ্ধান্তগুলি এখন নতুন রাজ্য সভাপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমন্বয়ে নেওয়া হবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সময়ের নিয়োগগুলি বাতিল করা হয়েছে এবং এখন নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কান্ডেলওয়ালের কর্মপদ্ধতি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার দিকে সকলের নজর থাকবে।
সরকার এবং সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন একটি বড় চ্যালেঞ্জ
ক্ষমতা এবং সংগঠনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কান্ডেলওয়ালের জন্য সহজ হবে না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আছেন, তবে মন্ত্রী ও বিধায়কদের নিজস্ব প্রত্যাশা থাকে। সংগঠন প্রধান হিসেবে, কর্মীদের সরকার থেকে নিরাশ না হতে দেওয়া এবং দলের ভিত্তি দুর্বল না হতে দেওয়া তাঁর দায়িত্ব হবে।
দলে পুরনো এবং নতুন মুখের মধ্যে সমন্বয়
২০২৩ সালের বিধানসভা এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস থেকে আসা অনেক নেতাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ দলে মিশে গেলেও অনেকেই এখনও নিজেদেরকে একাকী অনুভব করছেন। পুরনো বিজেপি কর্মীরা এই নতুন মুখদের এখনও সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারেনি। কান্ডেলওয়ালকে এই উভয় পক্ষের প্রত্যাশাগুলিকে balance করতে হবে, যাতে দলের মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্যে না আসে।
বিরোধী দলের কৌশল বুঝে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে
কংগ্রেস রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে কাজ শুরু করেছে। তারা বিজেপির আগের কৌশলগুলি বিশ্লেষণ করে নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমতাবস্থায়, বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতিকে বিরোধী দলের প্রতিটি চাল বুঝতে হবে এবং তার জবাব দেওয়ার জন্য কৌশল তৈরি করতে হবে।
জাতীয় নেতৃত্বের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ
লোকসভা এবং বিধানসভা উভয় নির্বাচনেই মধ্যপ্রদেশ বিজেপির পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিল। রাজ্যটি ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ২৩0টির মধ্যে ১৬৩টি আসন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসনেই জয়লাভ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, কান্ডেলওয়ালের উপর জাতীয় নেতৃত্বের বিশেষ নজর থাকবে। তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি এই পারফরম্যান্স বজায় রাখতে এবং আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।