ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরশিপ: কেন কোম্পানিগুলোর জন্য দুর্ভাগ্যজনক?

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরশিপ: কেন কোম্পানিগুলোর জন্য দুর্ভাগ্যজনক?

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরশিপ এখন কোম্পানিগুলোর জন্য সৌভাগ্যের পরিবর্তে দুর্ভাগ্যজনক প্রমাণিত হচ্ছে। বিসিসিআই-এর সঙ্গে স্পনসরশিপ চুক্তি করা অনেক বড় কোম্পানি আর্থিক ক্ষতি, নিয়ন্ত্রক চাপ এবং সম্মানহানির সম্মুখীন হয়েছে।

স্পোর্টস নিউজ: ড্রিম11 এখন বিসিসিআই-এর স্পনসরশিপ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে। এর কারণ হল অনলাইন গেমিং প্রোমোশন এবং রেগুলেশন বিল 2025 (Promotion and Regulation of Online Gaming Bill, 2025), যা ভারতে রিয়েল মানি যুক্ত গেমিং বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই বিল লাগু হওয়ার পরে ড্রিম11 তাদের ₹358 কোটির চুক্তি বাতিল করেছে।

এর সাথে ড্রিম11 সেই ব্র্যান্ডগুলোর দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যারা ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসর করার পরে আর্থিক ক্ষতি, নিয়ন্ত্রক চাপ বা সম্মানহানির সম্মুখীন হয়েছে। এই তালিকায় আগে থেকেই সাহারা, স্টার ইন্ডিয়া, অপ্পো, বাইজুস, পেটিএম এবং মাইক্রোম্যাক্স অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

Dream11-এর ধাক্কা

ভারতে Promotion and Regulation of Online Gaming Bill, 2025 লাগু হওয়ার পরে রিয়েল মানি যুক্ত অনলাইন গেমিং বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর কারণে ড্রিম11 বিসিসিআই-এর সাথে তাদের বড় স্পনসরশিপ চুক্তি শেষ করেছে। এই সিদ্ধান্তের সাথে ড্রিম11 সেই ব্র্যান্ডগুলোর দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যারা টিম ইন্ডিয়ার জার্সি স্পনসর করার পরে অপ্রত্যাশিত আর্থিক এবং নিয়ন্ত্রক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

স্পনসরশিপের দুর্ভাগ্যের কাহিনী

গত কয়েক বছরে ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসরশিপ অনেক ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত প্রধান কোম্পানিগুলোর কাহিনী এই প্রকার:

  1. সাহারা: সাহারা গ্রুপ 2001 থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলকে স্পনসর করেছে। কিন্তু সেবি (SEBI)-এর তদন্ত এবং নিয়ন্ত্রক কার্যকলাপের কারণে সাহারা দেউলিয়া হয়ে যায়। 2014 সালে গ্রুপের মালিক সুব্রত রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর পরে সাহারা গ্রুপ কখনও তাদের পূর্বের উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি।
  2. স্টার ইন্ডিয়া: সাহারার পরে স্টার ইন্ডিয়া টিম ইন্ডিয়াকে স্পনসর করেছে। কিন্তু হটস্টার এবং মিডিয়া অপারেশনের কারণে অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই টিম ইন্ডিয়ার স্পনসরশিপ স্টারের মতো ব্র্যান্ডের জন্যও ভাগ্যবান প্রমাণিত হয়নি।
  3. Oppo: চাইনিজ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অপ্পো 1,079 কোটি টাকার স্পনসরশিপ চুক্তি করেছিল। যদিও খারাপ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) এবং পেটেন্ট সংক্রান্ত আইনি বিরোধের কারণে অপ্পো সময়ের আগে তাদের চুক্তি শেষ করে।
  4. Byju's: ভারতের সবচেয়ে বড় এডটেক ইউনিকর্ন বাইজুস বিসিসিআইকে 158 কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। এর ফলে কোম্পানিকে দেউলিয়াত্বের আবেদন, নিয়ন্ত্রক তদন্ত এবং ব্যাপক ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
  5. পেটিএম এবং মাইক্রোম্যাক্স: পেটিএম আর্থিক চ্যালেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক চাপের সম্মুখীন হয়েছে। একই সময়ে মাইক্রোম্যাক্স, চীনা প্রতিযোগিতার কারণে ভারতীয় স্মার্টফোন বাজারে ধসে গেছে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি স্পনসরশিপ সবসময় ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং গ্লোবাল এক্সপোজারের প্রতীক। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি দ্বি-ধারী তলোয়ার প্রমাণিত হয়েছে। বড় কোম্পানিগুলো বিশাল বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রক বাধা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

Leave a comment