পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থানার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা উঁচুডিহার ২৭ বছরের সৌগত নন্দ ছোট থেকে প্রাকৃতিক জগতের প্রেমে আবদ্ধ। স্কুল পড়ার সময়ই তার নেশা ছিল গাছ লাগানো। স্নাতক পাসের পর বিএড এবং লাইব্রেরী সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করা এই যুবক ছোট্ট বাড়ির আঙিনাতেই নিজের শখকে পেশায় পরিণত করেছেন। আজ তার উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।
শখ থেকে পেশা: ইনডোর প্ল্যান্ট ফার্মের যাত্রা
সৌগত জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের শখকে ব্যবসায় রূপান্তর করেছেন। বাড়ির ছোট্ট জায়গায় একাধিক প্রজাতির ইনডোর প্ল্যান্ট লাগিয়ে তিনি তাদের যত্ন নেন এবং বিক্রি করেন। অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তিনি তার পণ্য সরবরাহ করছেন। প্রান্তিক গ্রামীণ এলাকা থেকেও এমন উদ্যোক্তা দেশ-বিদেশের বাজারে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।
দেশের সঙ্গে বিদেশেও ছড়িয়ে কদর
সৌগতের বাড়িতে প্রায় ৫০০ প্রজাতির ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে। তার ব্যবসা শুধুমাত্র রাজ্যসীমায় সীমাবদ্ধ নয়, দেশজুড়ে অর্ডার নেওয়ার পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশেও পাঠানো হয়। থাইল্যান্ড, ইকুইজেনেরিয়া সহ বিভিন্ন নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা গাছগুলো তিনি পরিচর্যা করে বিক্রি করছেন। তার এই উদ্যোগে প্রতি মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হচ্ছে।
প্রিয় শখের থেকে স্বনির্ভরতার শিক্ষা
ছোট থেকে গাছের প্রতি ভালোবাসা তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। সেই নেশা ধীরে ধীরে পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। সৌগতের উদ্যোগ দেখাচ্ছে, কিভাবে নিজের শখকে সৃজনশীলভাবে অর্থনৈতিক আয় আনে রূপান্তরিত করা যায়। তার প্রচেষ্টা যুব প্রজন্মকে স্বনির্ভর হওয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
বাড়ির আঙিনায় বোনা স্বপ্ন
সৌগত বাড়িতে ফুল, ফলের পাশাপাশি ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নেন। প্রতিটি প্রজাতি সে নিজ হাতে রোপণ ও পরিচর্যা করে। তার কাছে ফার্ন, অ্যাডেনিয়াম, হোয়া, অ্যানফরিয়াম, ক্যাকটাস, অক্সালিস, অ্যালোকেসিয়া, মনস্টার অ্যালবো সহ আরও একাধিক প্রজাতি রয়েছে। এগুলোর দাম ৫০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। সামান্য পরিচর্যায় এই গাছগুলোর বৃদ্ধি ও বিক্রি সম্ভব।
গ্রামের সন্তান, শহরের বাজারে প্রতিযোগিতা
প্রান্তিক গ্রামীণ এলাকায় থেকেও সৌগত অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন শহর এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গাছ বিক্রি করছেন। কাশ্মীর থেকে আন্দামান-সামুদ্রিক অঞ্চল পর্যন্ত তার গ্রাহক রয়েছে। এটি প্রমাণ করছে, সৃজনশীল উদ্যোগে স্থান বা অবস্থান বাধা নয়।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনার সমন্বয়
সৌগতের ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ে। অনলাইন অর্ডার, কুরিয়ার সার্ভিস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার—all এর মাধ্যমে তিনি ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। ছোট গ্রামীণ এলাকার যুবক হলেও তার ব্যবসা মডেল শহরের বড় উদ্যোক্তাদের মতো পেশাদার।
যুব প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বার্তা
সৌগতের গল্প যুব প্রজন্মকে দেখাচ্ছে যে, সীমিত সম্পদ এবং ছোট্ট জায়গা থাকলেও সৃজনশীল উদ্যোগ এবং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব। পড়াশোনা এবং শখকে সমন্বয় করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সৌগত জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতে ইনডোর প্ল্যান্ট ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করতে চান। নতুন প্রজাতি সংগ্রহ, আরও বড় গাছের ফার্ম এবং বিদেশি বাজারে সরাসরি রফতানি—এগুলো তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। যুবকদের জন্য এটি অনুপ্রেরণার বড় উদাহরণ, যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা, শখ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ একসাথে এগিয়ে চলেছে।
সমাপ্তি: স্বপ্ন, পরিশ্রম ও স্বনির্ভরতা
ছোট্ট বাড়ির আঙিনা, শখের গাছ এবং স্বপ্ন—এই তিনটি উপাদান সৌগতের জীবনে একত্রিত হয়ে পরিণত হয়েছে সৃজনশীল উদ্যোগে। তার ব্যবসার সাফল্য দেখাচ্ছে, যদি পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকে, তবে গ্রামের ছেলে- মেয়েরাও রাতারাতি ‘মালামাল’ হতে পারে।