ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধু’য়ের মাধ্যমে ১০০০ ছাত্রের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধু’য়ের মাধ্যমে ১০০০ ছাত্রের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে অবিরত আক্রমণ চলছে, যার ফলে পুরো পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: যখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছে এবং আকাশ মিসাইল ও ড্রোন-এ ভরে গেছে, তখন একটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক দক্ষতায়ই নিজের নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ভারত আবারও তাই প্রমাণ করেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ভয়াবহ সংঘাতের মধ্যে ইরান বিশেষ করে ভারতের জন্য নিজেদের বন্ধ আকাশসীমা খুলে দিয়েছে, যাতে সেখানে আটকে থাকা ভারতীয় ছাত্রদের বের করে আনা যায়।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে আটকে ছিলেন ভারতীয় ছাত্ররা

গত কয়েক দিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধসদৃশ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মিসাইল আক্রমণ, ড্রোন আক্রমণ ও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ফলে পুরো অঞ্চল অশান্ত। এমন পরিস্থিতিতে ইরানে পড়াশোনা করা ভারতীয় ছাত্ররা নিজেদের অসুরক্ষিত বোধ করছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে অবিরত বোমা বর্ষণের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসে সাহায্যের আবেদন করা হয়।

এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে ভারত যে দ্রুততা ও সংবেদনশীলতার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তার বৈদেশিক নীতির পরিপক্কতার পরিচায়ক। ইরান বিশেষ করে শুধুমাত্র ভারতের জন্য নিজেদের বন্ধ আকাশসীমা খুলে দিয়েছে, যাতে ছাত্রদের নিরাপদে বের করে আনা যায়। এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা দেখায় যে ভারতের আন্তর্জাতিক প্রভাব এখন শুধুমাত্র বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং স্থানীয় পর্যায়েও তার সম্মান ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘অপারেশন সিন্ধু’র সূচনা: একটি সংগঠিত উদ্ধার অভিযান

ভারত সরকার ‘অপারেশন সিন্ধু’র অধীনে ছাত্রদের উদ্ধারের জন্য সম্পূর্ণ কৌশল প্রস্তুত করেছে। বিদেশ মন্ত্রণালয়, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং ইরানে ভারতীয় মিশনের মধ্যে সমন্বয় করে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অপারেশন ঠিক যেমনভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ‘অপারেশন গঙ্গা’ অথবা করোনা কালে ‘বন্দে ভারত মিশন’ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

ইরানের মশহাদ শহর থেকে ছাত্রদের নিয়ে আসা প্রথম বিমান আজ রাত প্রায় ১১ টায় দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এই বিমানে প্রায় ২৫০ জন ছাত্র রয়েছেন। এছাড়াও শনিবার আরও দুটি ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রায় ৭৫০ জন ছাত্রকে ভারতে নিয়ে আসা হবে, যার ফলে মোট ১০০০ ছাত্রের নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত হবে।

ইরানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা

ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই মানবিক পদক্ষেপে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন। তেহরানে ভারতীয় দূতাবাস এবং ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অবিরত যোগাযোগ ছিল। ইরান স্পষ্ট করেছে যে যে কোন ভারতীয় নাগরিক যারা দেশ ছাড়তে চায় তাদের জন্য চার্টার্ড ফ্লাইটের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লীস্থ ইরানি দূতাবাসও এই পদক্ষেপের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে কিছু ছাত্রের আহত হওয়ার খবরের পর দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হয়েছে। ভারত সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইরান জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে আকাশসীমা খুলে দিয়েছে এবং ফ্লাইটগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

এই পুরো ঘটনাটি ভারতের বৈদেশিক নীতির সেই দিকটিকে উন্মোচিত করেছে যেখানে ‘নাগরিক প্রথম’ ভাবনা সর্বাগ্রে রয়েছে। ভারত শুধুমাত্র নিজের জনগণকে সংকট থেকে বের করে আনেনি, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নির্ভরযোগ্য ও সংবেদনশীল রাষ্ট্র হিসেবে নিজের ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে।

Leave a comment