ছ’ নম্বরে কলকাতা! তিন বছরের শীর্ষস্থান হারিয়ে উদ্বেগে রাজ্য, কেন্দ্রীয় রিপোর্টে ম্যালেরিয়ার ভয়াবহ চিত্র

ছ’ নম্বরে কলকাতা! তিন বছরের শীর্ষস্থান হারিয়ে উদ্বেগে রাজ্য, কেন্দ্রীয় রিপোর্টে ম্যালেরিয়ার ভয়াবহ চিত্র
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

বর্ষার আগমনে মশার রাজত্ব, বাড়ছে আতঙ্ক

বর্ষা মানেই জলজমা আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মশার উৎপাত। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। টানা বৃষ্টিতে শহরের অলিগলিতে জমেছে জল, তার ফাঁকে ফাঁকে জন্ম নিচ্ছে ম্যালেরিয়া বাহক মশা। ঠিক এই সময়েই এল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট, যা কলকাতাবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

শীর্ষ থেকে ষষ্ঠে! তিন বছরের রাজত্ব হারাল কলকাতা

২০২৪ সালের ম্যালেরিয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পরপর তিন বছর সর্বোচ্চ সংক্রমণের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা কলকাতা এবার নেমে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। ৭৭৫টি জেলার মধ্যে এমন স্থানে থাকা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। একাধিক ছোট জেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়েছে মেট্রো শহর কলকাতা।

পশ্চিম সিংভূম, কালাহান্ডি এগিয়ে, কলকাতা পেছনে

নতুন তালিকায় দেখা যাচ্ছে, কলকাতার আগে রয়েছে পশ্চিম সিংভূম (ঝাড়খণ্ড), কালাহান্ডি, রায়গাডা, কন্দমল (ওড়িশা) এবং গোড্ডা (ঝাড়খণ্ড)। একদিকে পাহাড়ি, অরণ্যঘেরা জেলা, আরেকদিকে রাজ্যের বাণিজ্যনগরী— দু’য়ের একই সারিতে থাকাটা যেন অস্বস্তিকর।

সংখ্যাতেও ভয় ধরাচ্ছে কলকাতা, ১০ হাজার পার

পশ্চিম সিংভূমে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৯১৯৯, কলকাতার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১০১৭৭। এতেই বোঝা যায়, প্রাথমিকভাবে শীর্ষস্থান থেকে নেমে এলেও, সংক্রমণের হার এখনও যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

মাত্র সাত জেলায় ১০ হাজারের বেশি সংক্রমণ, কলকাতাও তাতে শামিল

৭৭৫ জেলার মধ্যে ১০ হাজারের ওপরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র সাতটি জেলায়। এবং কলকাতা সেই তালিকায় রয়েছে— এ তথ্যই বুঝিয়ে দেয়, সংক্রমণ কমেছে ঠিকই, কিন্তু আশার আলো এখনও সুদূর।

মেট্রো শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কলকাতা বিপদের মুখে

এই রিপোর্টে উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে, দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলির মধ্যে এমন ভয়াবহ সংক্রমণ দেখা যায়নি। একমাত্র কলকাতা রয়েছে এই তালিকায়, যা শহরের নাগরিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়।

তিন বছর ধরে শীর্ষে ছিল কলকাতা, এখন কি বদল ঘটছে?

২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পরপর তিন বছর ম্যালেরিয়া আক্রান্তের নিরিখে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল কলকাতা। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার সেই অবস্থান থেকে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও ততটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না।

২০২৩-এ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭০০২, তুলনায় কমেছে

গত বছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে ঠিকই— ১৭০০২ থেকে এবার ১০১৭৭। কিন্তু এই সংখ্যাও কম নয়। বরং অন্যান্য জেলার তুলনায় যথেষ্টই বেশি, যা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলছে।

২০২২ সালে ছিল আরও ভয়াবহ, আক্রান্ত ২৭২০৯

২০২২ সালের চিত্র ছিল রীতিমতো আতঙ্কের। তখন আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছিল ২৭২০৯-এ। সেই তুলনায় এ বছরের সংখ্যা খানিকটা কম হলেও ম্যালেরিয়া রোধে শহরের স্বাস্থ্য দফতরের চ্যালেঞ্জ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

২০২১-এর দুঃসময় এখনও প্রাসঙ্গিক

২০২১ সালেও কলকাতা ছিল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণের শহর। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১২৯০। এত বছর পরেও শহর যে এখনও তালিকার প্রথম সারিতেই রয়ে গিয়েছে, তা যথেষ্ট ভাবনার বিষয়।

উপসংহার: নামমাত্র উন্নতি, প্রয়োজন আরও সক্রিয়তা

তিন বছরের পরিসংখ্যান তুলনা করলে স্পষ্ট বোঝা যায়, আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও কলকাতা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে। বর্ষাকাল চলাকালীন সময়েই যদি এমন ছবি হয়, তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। নাগরিকদের সচেতনতা এবং প্রশাসনিক তৎপরতা— এই দুই-ই এখন সময়ের দাবি।

Leave a comment