নির্বাচনের আগে বিতর্ক বিহারের ভোটার তালিকা ‘সংশোধন’ থামাতে সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া

নির্বাচনের আগে বিতর্ক বিহারের ভোটার তালিকা ‘সংশোধন’ থামাতে সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারই বিরোধিতা করে এবার সরাসরি দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর অভিযোগ— বহু পুরনো ভোটারদেরও ফের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে, যা চরম অমানবিক এবং সংবিধানবিরোধী।

সংবিধান লঙ্ঘন করছে কমিশনের নির্দেশ”, তীব্র তোপ মহুয়ার

মহুয়ার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নির্দেশিকা সংবিধানের ১৪, ১৯(১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারাকে লঙ্ঘন করছে। একইসঙ্গে তা জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ভোটার রেজিস্ট্রেশনের নিয়মও ভেঙেছে বলে দাবি তাঁর। তিনি শীর্ষ আদালতের কাছে অবিলম্বে এই নির্দেশিকাকে বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বাংলাতেও কি আসবে এই নির্দেশ? আশঙ্কায় মহুয়া

শুধু বিহারেই নয়—এই ধরনের বিতর্কিত নির্দেশ যাতে বাংলাতেও কার্যকর না হয়, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন মহুয়া মৈত্র। আদালতের কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, কমিশন যেন কোনও রাজ্যেই এমন নির্দেশিকা জারি করতে না পারে। এমন পদক্ষেপের ফলে গরিব, প্রান্তিক এবং প্রবাসী মানুষের বড় ক্ষতি হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।

ভোটারের নাম থাকলেও ফের নাগরিকত্বের প্রমাণ! তীব্র প্রশ্ন মহুয়ার

মহুয়ার দাবি, যাঁরা বারবার ভোট দিয়েছেন, বহুদিন তালিকায় নাম রয়েছে, তাঁদেরই আবার জন্ম সনদসহ নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে। এমন পদক্ষেপ নজিরবিহীন। নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এ এক নতুন পথ, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই দুর্বল করতে পারে।

SIR নির্দেশের বিরুদ্ধে উঠছে সর্বদলীয় প্রতিরোধ

মহুয়া একা নন। কমিশনের ‘Special Intensive Revision’ (SIR) নির্দেশিকার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস এবং আরও অনেক বিরোধী দল। বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি সহ বিরোধীরা আইনি পথে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সর্বত্রই এক সুর— সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই।

প্রমাণ না থাকলেই বাদ পড়বে নাম! কমিশনের কঠোর বিধি নিয়ে উদ্বেগ

নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে— আধার বা রেশন কার্ড যথেষ্ট নয়। জন্মের সনদ, পিতামাতার নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক। এমনকি ২০০৪-এর পর জন্মানো ব্যক্তিদের জন্য নিজের ও অভিভাবকের দু’জনেরই জন্ম শংসাপত্র লাগবে। ভোটারদের উপর এই অতিরিক্ত বোঝা তুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ।

দুর্বল, গরিব, দলিত ও পরিযায়ীরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন

বিরোধীদের মতে, এই নির্দেশের ফলে বিপদে পড়বেন গরিব, গ্রামীণ, দলিত ও আদিবাসী শ্রেণি— যাঁদের কাছে প্রমাণপত্র নেই বা সংগ্রহ করা কঠিন। তাঁরা বাদ পড়বেন ভোটার তালিকা থেকে। মহুয়ার আশঙ্কা, এটি আসলে এক প্রকার ‘নাগরিকত্ব পরীক্ষার ছদ্ম রূপ’, যা NRC-এর থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।

সংবিধান বাঁচাতে লড়ছি— সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা মহুয়ার

আদালতে করা আবেদন পেশের পর সেই তথ্য নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন মহুয়া মৈত্র। লিখেছেন— "নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলাম। চাই স্থগিতাদেশ, চাই গণতন্ত্র বাঁচুক।” তাঁর এই প্রতিবাদ ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমেও আলোড়ন তুলেছে।

নির্বাচন কমিশনের সাফাই— সবকিছু নিয়ম মেনেই

এই নির্দেশ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও, নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে— সবকিছু ২০০৩ সালের আইন ও নির্দেশ অনুসারে করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন থাকলেও প্রয়োগের পদ্ধতি ও সময় নির্বাচনের আগে হওয়ায় তা নিয়েই সন্দেহ ও উদ্বেগ বাড়ছে।

Leave a comment