নওশাদ সিদ্দিকীর বিস্ফোরক অভিযোগ

নওশাদ সিদ্দিকীর বিস্ফোরক অভিযোগ

বুকে মেরেছে, জামা ছিঁড়েছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছি!— পুলিশের বিরুদ্ধে সরব আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। সোমবার ধর্মতলার উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঘিরে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে তিনি। লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে গ্রেফতার করে।

ধর্মতলায় কনভেনশন ঘিরে উত্তেজনা

ধর্মতলায় এদিন আইএসএফ-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত হয়েছিল কনভেনশন। মূল দাবি ছিল SIR আইন ও ওয়াকফ আইন বাতিল করা। কিন্তু অভিযোগ, এই কনভেনশনের জন্য পুলিশের কোনো অনুমতি ছিল না। ফলে শুরু থেকেই তৈরি হয় টানটান পরিস্থিতি। আইএসএফ কর্মীরা মিছিল করে ধর্মতলায় অবস্থান নিতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। এর পরেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মুহূর্ত

সোমবার দুপুরে ডোরিনা ক্রসিংয়ে হঠাৎই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি শুরু হয়। অভিযোগ, মিছিলে থাকা বহু নেতা-কর্মীকে টেনে হিঁচড়ে আটক করার চেষ্টা করে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। সেখানেই নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের।

বিধায়কের অভিযোগ: সিভিল ড্রেসে মারধর

ধস্তাধস্তির পরেই নওশাদ অভিযোগ করেন, পুলিশের ভিড়ের মধ্য থেকে সিভিল ড্রেসে থাকা কিছু লোক তাঁকে আঘাত করে। তাঁর কথায়, “বুকে মেরেছে, জামা ছিঁড়ে দিয়েছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছি আমি।” তিনি দাবি করেন, এই হামলা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে যাতে আন্দোলনের কণ্ঠস্বর দমন করা যায়। এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে বিতর্ক ছড়ায়।

অসুস্থতার দাবি ও উত্তেজনা বৃদ্ধি

বিধায়ক নওশাদ জানান, পুলিশের ধাক্কাধাক্কির জেরে তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘটনাস্থলে থাকা কর্মীরা তাঁকে ঘিরে স্লোগান তুলতে থাকেন। অভিযোগ, তাঁকে সেখান থেকে টেনে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এর ফলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায় ধর্মতলায়। যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয় ডোরিনা ক্রসিং ও আশপাশের রাস্তায়।

গ্রেফতার ও লালবাজার গমন

অবশেষে পুলিশ নওশাদসহ একাধিক আইএসএফ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল, খুলে দেওয়া হয় ডোরিনা ক্রসিং। তবে আইএসএফ কর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।

আইএসএফ-এর পাল্টা ক্ষোভ

আইএসএফ নেতৃত্বের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করার জন্য পুলিশ এমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁদের দাবি, পুলিশই উস্কানি দিয়ে সংঘর্ষ তৈরি করেছে। নওশাদের উপরে হামলার ঘটনাকে তাঁরা “গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত” বলে মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশারিও দেন আইএসএফ নেতৃত্ব।

পুলিশের অবস্থান

অন্যদিকে পুলিশের তরফে দাবি, অনুমতি ছাড়া কনভেনশন ও মিছিল করার চেষ্টা করেছিল আইএসএফ। তার জেরেই আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হয়। ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে পদক্ষেপ করতে হয়েছিল। পুলিশের দাবি, ধস্তাধস্তির সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কিছু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে নওশাদকে মারধরের অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে।

রাজনৈতিক মহলে তরঙ্গ

এই ঘটনার পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। একাংশ বলছে, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমাতে পুলিশের ভূমিকা ক্রমশ প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অন্যদিকে শাসক দলের দাবি, আইএসএফ ইচ্ছাকৃতভাবেই উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক লাভ নিতে চাইছে। রাজনীতির অঙ্গনে এই বিষয়টি আগামী দিনে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

লড়াইয়ের বার্তা

নওশাদ সিদ্দিকীর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, তিনি পিছিয়ে আসার পাত্র নন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও শারীরিক অসুস্থতার অভিযোগ সামনে আসার পরও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “আমাদের আন্দোলন চলবেই। আইন বাতিলের দাবিতে লড়াই থেকে সরে আসব না।” এই বার্তা আইএসএফ কর্মীদের আরও উদ্দীপ্ত করেছে।ধর্মতলার এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্যে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। নওশাদের অভিযোগ কতটা সত্য, তা তদন্তে সামনে আসবে। তবে পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ-এর সংঘর্ষ রাজনৈতিক ময়দানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনে এই ইস্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে যে ঝড় উঠতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

Leave a comment