নিকি হ্যালি সতর্ক করেছেন যে আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মুখে। তিনি বলেন, চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে প্রতিহত করতে আমেরিকার উচিত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করা, শুল্ক আরোপ করা একটি বড় কৌশলগত ভুল।
US-India Relations: আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, আমেরিকা যদি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে রুখতে চায়, তাহলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে হবে। হ্যালি রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে একটি কৌশলগত ভুল বলেছেন এবং জানান, এর ফলে আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের ক্ষতি হবে।
আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক সংকটের মুখে, এমনটাই আশঙ্কা
নিকি হ্যালি বলেছেন, এই মুহূর্তে আমেরিকা-ভারত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারত সবচেয়ে বড় সহযোগী হতে পারে। হ্যালির মতে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্প্রতি যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা উভয় দেশের স্বার্থের জন্য ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে যদি আস্থা না থাকে, তাহলে চীন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। আমেরিকার উচিত তার বিদেশনীতি নতুন করে বিবেচনা করা এবং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার দিকে পদক্ষেপ নেওয়া।
শুল্ক বিতর্ক ও রাশিয়ার তেল ইস্যু
হ্যালি এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যখন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫% পারস্পরিক শুল্ক এবং ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, রাশিয়া থেকে তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য করার সমতুল্য। কিন্তু হ্যালির বিশ্বাস, ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করা কৌশলগতভাবে একটি ভুল পদক্ষেপ। তিনি বলেন, এতে ভারত আমেরিকা থেকে দূরে চলে যাবে এবং এর থেকে কেবল চীন লাভবান হবে।
ভারতের গুরুত্বের উপর জোর
নিকি হ্যালি ভারতের ভূমিকার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষা রুখতে ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ভারতের একটি বিশাল জনসংখ্যা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।
হ্যালির মতে, আমেরিকা যদি তার সাপ্লাই চেন বা সরবরাহ ব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে ভারতের দিকে নিয়ে আসে, তবে তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে। ভারতের প্রযুক্তিগত ও শিল্প ক্ষমতা রয়েছে, যা আমেরিকার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা
হ্যালি বলেন, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব থাকা উচিত। ভারত ইতিমধ্যেই আমেরিকা ও ইজরায়েলের মতো দেশের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকা যদি ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক মজবুত না করে, তাহলে চীন-রাশিয়ার মতো দেশ এশিয়ায় আমেরিকার প্রভাব দুর্বল করে দিতে পারে। আমেরিকাকে বুঝতে হবে যে, ভারত ছাড়া এশিয়ায় চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
ট্রাম্প-মোদী আলোচনার আহ্বান
নিকি হ্যালি আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরাসরি আলোচনা করা উচিত। তাঁর মতে, দুই নেতার উচিত সমস্ত বিরোধ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা, যাতে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা যায়। হ্যালি ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, সেই সময়ও দুই দেশের মধ্যে মতভেদ ছিল, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত হয়েছিল।
চীনকে প্রতিরোধের কৌশল
নিকি হ্যালি বলেন, চীন এশিয়ায় ক্রমাগত তার প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক ক্ষেত্রে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমেরিকার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমেরিকার ভারত-এর মতো একটি সহযোগী দেশের প্রয়োজন। আমেরিকা যদি ভারতের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করে, তবে চীন ও রাশিয়া উভয়ই লাভবান হবে। আমেরিকাকে বুঝতে হবে যে, ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধুত্বই এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।