রাধিকা আপ্তের গর্ভাবস্থার লড়াই বলিউডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক তীব্র কাহিনি !

রাধিকা আপ্তের গর্ভাবস্থার লড়াই বলিউডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক তীব্র কাহিনি !

হাসির আড়ালে কান্না

আলো ঝলমলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাধিকা আপ্তের দৃপ্ত চেহারায় কখনও ধরা পড়ে না চোখের জল। লাল কার্পেট, ফ্ল্যাশ লাইট আর গ্ল্যামারের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এমন এক যন্ত্রণা, যা শুধুই তিনিই জানেন। দর্শক যখন তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন, তখন পর্দার পিছনে তিনি লড়ে যাচ্ছেন নিজের শরীর ও মনের ক্লান্তির সঙ্গে।

গল্পের শুরু ‘ফ্রিডম টু ফিড’-এ

সম্প্রতি নেহা ধূপিয়ার আলোচনামূলক শো ‘ফ্রিডম টু ফিড’-এ বসে নিজের গর্ভাবস্থার শুরুর অভিজ্ঞতা খোলাখুলি জানালেন রাধিকা। সেখানে তিনি তুলে ধরলেন, কেমন করে গর্ভধারণের প্রথম দিকেই শুটিং ফ্লোরে তাঁকে শারীরিক কষ্ট আর মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে।

শরীরে-মনে বদলের ঝড়

রাধিকা জানান, গর্ভাবস্থার শুরুতে তাঁর শরীরে হচ্ছিল দ্রুত পরিবর্তন— হঠাৎ করে খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে, অবসাদ, ব্যথা— সব মিলিয়ে এক নিঃশব্দ লড়াই। কিন্তু এর মাঝেই টানা শুটিং চলছিল, আর সেই ক্লান্তি ঢাকা পড়ছিল ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে।

প্রযোজকের নির্মম প্রতিক্রিয়া

ভারতে এক প্রজেক্টের শুটিং চলাকালীন তিনি যখন নিজের প্রেগনেন্সির খবর দেন, প্রযোজকের প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারেই শীতল। বরং তাঁকে পরতে বলা হয় টাইট জামা, যা তাঁর জন্য তখন ভীষণ অস্বস্তিকর। শিল্পীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার প্রতি এমন উদাসীনতা তাঁকে ভিতরে ভিতরে আহত করেছিল।

প্রথম ট্রাইমেস্টারের যন্ত্রণা

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসই একজন নারীর জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়। শরীর চাই বিশ্রাম, মন চাই সান্ত্বনা। কিন্তু রাধিকা সেই সময়েও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত কষ্ট ঢেকে রাখার এই লড়াই তাঁকে শিখিয়েছে, বলিউডে সবসময় মানবতা জায়গা পায় না।

চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অনুমতিও মেলেনি

অভিনেত্রী জানান, তখন তিনি ভাত, পাস্তা ইত্যাদি খাওয়ার প্রবণতায় ছিলেন, শরীরে পরিবর্তন হচ্ছিল প্রতিদিন। কিন্তু কেউ তাঁর কষ্ট বোঝেনি। এমনকি প্রচণ্ড ব্যথার সময়ও তাঁকে ডাক্তার দেখাতে দেওয়া হয়নি। তাঁর গলায় সেই স্মৃতির যন্ত্রণা আর অভিমান একসঙ্গে ঝরে পড়ে।

বিদেশে উল্টো অভিজ্ঞতা

তবে সব অভিজ্ঞতাই অন্ধকার নয়। এক আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে কাজ করার সময় সম্পূর্ণ উল্টো আচরণ পান রাধিকা। সেখানে পরিচালক তাঁর পরিবর্তিত শারীরিক গঠনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেন এবং আশ্বাস দেন, ‘তুমি যেমনই হও, ঠিক আছো, কারণ তুমি প্রেগন্যান্ট।’

মানবিক প্রতিক্রিয়ার আশীর্বাদ

শুধু একটি সহজ, মানবিক প্রতিক্রিয়া— যা অনেকের কাছে তুচ্ছ মনে হতে পারে— রাধিকাকে দিয়েছিল বিরাট মানসিক স্বস্তি। গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমর্থন এক নারীর কাছে হয়ে ওঠে অমূল্য।

বিশেষ সুবিধা নয়, শুধু সহানুভূতি

রাধিকা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি কোনও বিশেষ সুবিধা চাননি। তাঁর একটাই চাওয়া ছিল— একটু বোঝাপড়া, একটু মানবতা। পেশাগত দায়িত্বের গুরুত্ব তিনি বোঝেন, কিন্তু কাজের জায়গায় সহানুভূতি থাকলেই সেই দায়িত্ব পালন আরও সহজ হয়।

বলিউডের মনোভাবের প্রশ্ন

এই অভিজ্ঞতা শুধু ব্যক্তিগত যন্ত্রণা নয়, বরং বলিউডের অভ্যন্তরীণ মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলে। গর্ভাবস্থা কোনও প্রতিবন্ধক নয়— বরং এটি একজন নারীর জীবনের সম্মান পাওয়ার দাবি আরও বাড়িয়ে দেয়।

প্ল্যাটফর্মের সাহসী ভূমিকা

‘ফ্রিডম টু ফিড’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম এই ধরনের গল্প প্রকাশ্যে আনার সুযোগ করে দিয়েছে। রাধিকারের অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর নিজের নয়— এটি অসংখ্য কর্মরত নারীর কণ্ঠস্বর, যারা প্রতিদিন লড়াই করেন নিজের শরীর, মন এবং সম্মানের জন্য।

Leave a comment