পূর্ণিমার তারিখে বিভ্রান্তি, ভক্তদের প্রশ্ন — কবে রাখবেন ব্রত
শ্রাবণ মাসের শেষ পূর্ণিমা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। আগস্টের প্রথম পূর্ণিমা আর শ্রাবণ মাসের শেষ পূর্ণিমা—দুটি আলাদা নাকি একই? এবার বৈদিক ক্যালেন্ডারের হিসাবে পূর্ণিমা তিথি পড়ছে দুই দিনে, তাই ব্রতের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর পূজা করলে সংসারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে, আর শিব-পার্বতীর আশীর্বাদে দূর হয় সব বাধা। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই পূর্ণিমার উপবাস বৈকুণ্ঠে স্থান পাওয়ার পথ খুলে দেয় এবং সকল ইচ্ছা পূরণ করে।
৮ না ৯ আগস্ট? বৈদিক গণনায় মিলল উত্তর
২০২৫ সালে পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ৮ আগস্ট দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে এবং শেষ হবে ৯ আগস্ট দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে। শাস্ত্র মতে, পূর্ণিমা ব্রত সেই দিন রাখা হয়, যেদিন সন্ধ্যায় পূর্ণিমা তিথি থাকে। সেই নিয়ম মেনেই জ্যোতিষীরা বলছেন—৮ আগস্ট, শুক্রবারই রাখতে হবে শ্রাবণ পূর্ণিমার উপবাস। কারণ এই দিন সূর্যাস্তের পরও পূর্ণিমা তিথি বিরাজ করবে। তবে, রাখিবন্ধন উদযাপিত হবে ৯ আগস্ট, কারণ সেদিন উদয়কালে পূর্ণিমা তিথি থাকবে। অর্থাৎ ৮ আগস্ট হবে ব্রতের দিন, ৯ আগস্ট রাখিবন্ধনের দিন।
শ্রাবণ পূর্ণিমায় দেব-দ্বয়ের পূজায় মিলবে বিশেষ ফল
শ্রাবণ মাসের শেষ পূর্ণিমা শুধুমাত্র বিষ্ণু-পূজার জন্য নয়, শিব-পূজার জন্যও বিশেষ শুভ দিন। এই তিথিতে একসঙ্গে দুই দেবতার পূজা করলে বহু গুণ পুণ্য লাভ হয় বলে বিশ্বাস। শাস্ত্র নির্দেশ দেয়, পূর্ণিমার ভোরে স্নান সেরে শুদ্ধ বসনে উপবাসের সংকল্প নিতে হবে। তারপর শুরু হবে অভিষেকের আয়োজন—প্রথমে শঙ্খে জল ভরে ভগবান বিষ্ণুর অভিষেক, তারপর তুলসী মঞ্জরি অর্পণ এবং নৈবেদ্য নিবেদন। শঙ্খের জলে জাফরান মিশিয়ে অক্ষত ও ফুল সহ অভিষেক করলে ভক্ত পায় অসীম পুণ্য।
পঞ্চামৃত দিয়ে শিবের অভিষেক, সংসারে আনবে শান্তি
বিষ্ণুর পূজার পর শিব-পার্বতীর আরাধনাও করতে হবে শ্রাবণ পূর্ণিমায়। বিশেষ করে এই দিনে পঞ্চামৃত—দুধ, দই, মধু, ঘি ও চিনি মিশিয়ে শিবলিঙ্গে অভিষেক করার কথা বলা হয়েছে পুরাণে। বিশ্বাস, এর ফলে জীবনে কাটে দুঃখ-কষ্ট, সংসারে আসে সমৃদ্ধি। ভক্তরা এদিন মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে ‘ওম নমঃ শিবায়’ জপ করলে প্রাপ্ত আশীর্বাদ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। শিব ও বিষ্ণুর যুগলপূজা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থিতি ও উন্নতির পথ প্রশস্ত করে।
ধর্মীয় তাৎপর্যে ভরপুর শ্রাবণ পূর্ণিমা ২০২৫
এবারের শ্রাবণ পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং ভক্তির এক মহোৎসব। শাস্ত্র বলছে, এদিন উপবাস ও পূজার মাধ্যমে ভক্তের মন হয় নির্মল, চিন্তা হয় শুদ্ধ। সংসারের কলহ মেটে, অসুস্থতা দূর হয় এবং ধন-সম্পদে ভরে ওঠে ভাণ্ডার। বিশেষত, শিব ও বিষ্ণুর মিলিত আশীর্বাদ জীবনে আনে শান্তি ও সফলতা। তাই ভক্তদের জন্য ৮ আগস্টের এই তিথি শুধু একটি তারিখ নয়, বরং আধ্যাত্মিক উত্থানের এক সোনালি সুযোগ।