উত্তর প্রদেশ এटीएस (ATS) একটি বৃহৎ অবৈধ ধর্মান্তরণ চক্রের পর্দা ফাঁস করে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষিত জামালুদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুর বাবা এবং তার সহযোগী নীতু ওরফে নাসরিনকে গ্রেফতার করেছে। নিজেকে ‘পীর বাবা’ এবং ‘হজরত বাবা জালালুদ্দিন’ বলে পরিচয় দেওয়া ছাঙ্গুর বাবা বিগত কয়েক বছর ধরে এই গভীর ষড়যন্ত্রটি চালাচ্ছিল। তদন্তে জানা গেছে, এই চক্রটি বিদেশ থেকে, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার তহবিল পেয়েছিল, যা সংগঠিত ধর্মান্তরণ এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ব্যবহার করা হত।
সূত্রানুসারে, চক্রটির তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত এবং সম্প্রতি রাজ্যে সংঘটিত কয়েকটি ‘ঘর ওয়াপসি’-র ঘটনা এ টি এস-কে এই নেটওয়ার্ক পর্যন্ত পৌঁছতে সাহায্য করেছে।
ধর্মান্তরণের ভয়ংকর খেলা
এই চক্রের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং ধূর্ত ছিল। এ টি এস-এর রিপোর্টে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যা স্পষ্টভাবে এই নেটওয়ার্কের গভীরতা এবং ষড়যন্ত্রের গুরুত্ব প্রকাশ করে।
• মুম্বাই থেকে আসা একটি পরিবার: তদন্তে জানা গেছে, ছাঙ্গুর বাবা মুম্বাইয়ের বাসিন্দা নবীন ঘনশ্যাম রোহরা, তার স্ত্রী নীতু এবং মেয়ে সমালে-এর মস্তিস্ক ধোলাই করে তাদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। এই তিনজন তাদের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে জামালুদ্দিন, নাসরিন এবং সাবিহা রাখে। এরা সবাই বালরামপুরের মਧপুর গ্রামের চাঁদ আউলিয়া দরগার কাছে থাকত।
• দরগা ধর্মান্তরণের কেন্দ্র: ছাঙ্গুর বাবা ‘শিজর-এ-তৈয়্যবা’ নামে একটি বই প্রকাশ করে, যার মাধ্যমে সে ইসলাম ধর্ম প্রচার করত। দরগাকে কেন্দ্র করে সেখানে আসা লোকেদের মস্তিস্ক ধোলাই করা হতো।
• জোর করে ধর্মান্তরণ: লখনউয়ের বাসিন্দা গুঞ্জা গুপ্তাকে আবু আনসারি ‘অমিত’ নামে ফাঁসিয়ে ছাঙ্গুর বাবার দরগায় নিয়ে যায়। সেখানে তার সহযোগী নীতু এবং অন্যান্য সঙ্গীরা গুঞ্জাকে মস্তিস্ক ধোলাই করে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করে এবং তার নাম আলিনা আনসারি রাখা হয়।
কোটি টাকার তহবিল
• বিদেশ থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল: চক্রটি বিগত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিদেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে। এই টাকা ধর্মান্তরণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে চক্রের সদস্যরা বালরামপুরে শোরুম, বাংলো এবং বিলাসবহুল গাড়িও কিনেছে।
• ৪০ বারের বেশি বিদেশ ভ্রমণ: তদন্তে জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা ইসলামিক দেশগুলিতে প্রায় ৪০ বার ভ্রমণ করেছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের প্রমাণ দেয়।
• ৪০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: ছাঙ্গুর বাবা এবং তার সঙ্গীদের নামে এবং বিভিন্ন ভুয়া সংস্থার নামে ৪০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, যেগুলিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
জাতি ভিত্তিক ধর্মান্তরণ হার
চক্রটি ধর্ম পরিবর্তনের জন্য জাতির ভিত্তিতে আলাদা আলাদা অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করেছিল:
• ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা সরদার মেয়ে: ₹15–16 লক্ষ
• অনুন্নত জাতির মেয়ে: ₹10–12 লক্ষ
• অন্যান্য জাতির মেয়ে: ₹8–10 লক্ষ
• অসহায়দের শিকার: ছাঙ্গুর বাবা, মাহবুব, পিঙ্কি হরিজন, হাজিরা শংকর, এমেেন রিজভি, সগীর এবং নীতু রোহরা-র মতো চক্রের সদস্যরা গরিব ও অসহায় লোকেদের নিশানা করত। ধর্মান্তরণ না করলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হত।
আগেও গুরুতর মামলা নথিভুক্ত
এর আগেও ছাঙ্গুর বাবার নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আইনের জাল বিস্তার করা হয়েছে। আজমগড়ের দেওগাঁও থানায় তার কয়েকজন সহযোগী এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে অবৈধ ধর্মান্তরণ সংক্রান্ত একটি মামলা এফআইআর নম্বর ২২১/২৩-এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই সক্রিয় চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ধর্ম পরিবর্তনের কার্যকলাপে জড়িত ছিল, যার পর্দা এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।
তদন্তে এ টি এস
ইউপি এ টি এস (UP ATS) এখন এই মামলার গভীর তদন্ত করছে। সূত্রের খবর, চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও অনেক মুখ শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসতে পারে। আপাতত, সংস্থাগুলি চক্রের তহবিল, বিদেশ সংযোগ এবং সম্পত্তির তদন্তে নিয়োজিত রয়েছে।