Adani Group: আদানি গ্রুপ অধিগ্রহণের দৌড়ে নিজেকে সবার আগে রাখতে ৮,০০০ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছে। এই বৃহৎ আর্থিক প্রস্তাবের কারণে আদানি গ্রুপ এই ডিলের শক্তিশালী দাবিদারদের মধ্যে গণ্য হয়েছে।
দেশের দ্রুত বর্ধনশীল কর্পোরেট হাউসগুলির মধ্যে অন্যতম আদানি গ্রুপ এবার আরও একটি বড় ডিলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। গ্রুপটি দেউলিয়াত্ব প্রক্রিয়া অতিক্রম করা জয়প্রকাশ অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড (JAL)-কে কিনতে প্রায় ১২,৫০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আদানি গ্রুপ নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে পেশ করেছে।
৮০০০ কোটির অগ্রিম অর্থের প্রতিশ্রুতি
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সূত্রানুসারে, আদানি গ্রুপ তাদের গাম্ভীর্য প্রমাণ করতে ৮০০০ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম দেওয়ার কথা বলেছে। এর ফলে তারা অন্যান্য দরদাতাদের থেকে এগিয়ে গেছে। এই ডিলটিতে অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে ডালমিয়া গ্রুপ, বেদান্ত, পিএনসি ইনফ্রাটেক এবং জেএসপিএল (নবীন জিন্দালের কোম্পানি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আদানি গ্রুপের প্রস্তাবটি সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
JAL কোন কোন ক্ষেত্রে সক্রিয়
জয়প্রকাশ অ্যাসোসিয়েটস একটি বহু-ক্ষেত্রীয় কোম্পানি, যার ব্যবসা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিস্তৃত। এর মধ্যে সিমেন্ট নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং হোটেল শিল্প অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানির ১০ মিলিয়ন টনের সিমেন্ট নির্মাণের ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও, পাঁচটি বিলাসবহুল হোটেল, সার তৈরির একটি ইউনিট এবং নয়ডা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় ২৫০০ একর জমি কোম্পানির সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, গ্রেটার নয়ডাতে বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটও এই কোম্পানির অধীনে ছিল, যেখানে আগে ফর্মুলা ওয়ান রেস অনুষ্ঠিত হত।
ঋণের ভারী বোঝা দ্বারা জর্জরিত কোম্পানি
জয়প্রকাশ অ্যাসোসিয়েটস গত কয়েক বছর ধরে ভারী ঋণের বোঝা বহন করে চলেছে। কোম্পানিটি দেশের ২৫টি ব্যাংক থেকে প্রায় ৪৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। এই ব্যাংকগুলির মধ্যে প্রধানত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক এবং আইডিবিআই ব্যাংকের নাম উল্লেখযোগ্য। মার্চ ২০২৫-এ এই ব্যাংকগুলি মিলিতভাবে JAL-এর ডুবন্ত ঋণ ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি (NARCL)-কে মাত্র ১২,৭০০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়।
সিমেন্ট এবং রিয়েল এস্টেটে সম্প্রসারণের প্রস্তুতি
আদানি গ্রুপ ইতিমধ্যেই ভারতে সিমেন্ট সেক্টরে দ্রুত পা রাখছে। তারা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আম্বুজা সিমেন্ট এবং এসিসি-র মতো বড় ব্র্যান্ড অধিগ্রহণ করেছে। এবার গ্রুপের পরিকল্পনা হল মধ্য ও উত্তর ভারতে সিমেন্টের নিজস্ব নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করা, এবং এই কৌশল অনুসারে JAL-এর কেনাকাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
JAL-এর জমিতেও আদানির নজর
JAL-এর নয়ডা-গ্রেটার নয়ডা অঞ্চলে যে ২৫০০ একর জমি রয়েছে, তা রিয়েল এস্টেট সেক্টরে আদানি গ্রুপের জন্য একটি সোনালী সুযোগ হতে পারে। দিল্লি-এনসিআরে জমির দাম এবং প্রকল্পের মূল্য বিবেচনা করে এই সম্পত্তির ব্যবসায়িক গুরুত্ব অনেক বেশি।
শেয়ারের পরিস্থিতি এবং বাজার প্রবণতা
বর্তমানে জেএএল-এর শেয়ারের দাম বাজারে মাত্র ৩ টাকা এবং এর সামনে 'ট্রেডিং রেস্ট্রিক্টেড' ট্যাগ লাগানো আছে। যদিও, বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আদানি গ্রুপ এই কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে, তবে এতে নতুন প্রাণ আসতে পারে এবং শেয়ার বাজারে এর পরিস্থিতি উন্নত হতে পারে।
বড় কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবার আগে আদানি
বেদান্ত, ডালমিয়া গ্রুপ এবং নবীন জিন্দালের জেএসপিএল-এর মতো বড় কোম্পানিগুলিও এই ডিলটি পাওয়ার দৌড়ে রয়েছে। তবে আদানি গ্রুপের দেওয়া অগ্রিম পরিশোধের প্রস্তাব এবং সবচেয়ে বড় দর তাদের অন্যান্য দাবিদারদের থেকে এগিয়ে রাখে। এর ফলে ঋণদাতা এবং নীতিগত সংস্থাগুলিও ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে।
NCLT-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় ডিল
এখন সকলের দৃষ্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ল' ট্রাইব্যুনাল (NCLT)-এর সিদ্ধান্তের দিকে। ট্রাইব্যুনালকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে ঋণদাতাদের সম্মতি এবং প্রস্তাবগুলির পর্যালোচনার পরে চূড়ান্তভাবে কোম্পানিটি কাকে হস্তান্তর করা হবে। যদি আদানি গ্রুপের অধিগ্রহণ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, তবে এটি ২০২৫ সালের অন্যতম বৃহত্তম কর্পোরেট ডিল হিসেবে গণ্য হবে।