আফগান বিদেশ মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। এই সফরকে ভারত এবং তালিবান শাসনের মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যোগাযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের একটি নতুন কূটনৈতিক মাত্রা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
Afghanistan Foreign Minister: আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি (Amir Khan Muttaqi) ভারত সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকারের পতনের প্রায় চার বছর পর এটি ভারত এবং তালিবান শাসন (Taliban Regime)-এর মধ্যে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগের সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুত্তাকির এই সফর ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
মুত্তাকির ভারত সফরের গুরুত্ব
আফগান বিদেশ মন্ত্রীর এই সফর ভারতের কূটনৈতিক নীতি (diplomatic policy)-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুত্তাকি তাঁর সফরের সময় নয়াদিল্লিতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সূত্র অনুযায়ী, তিনি এখানে দারুল উলুম দেওবন্দ (Darul Uloom Deoband) মাদ্রাসা এবং তাজমহল (Taj Mahal) পরিদর্শনে যাবেন। বর্তমানে দেওবন্দ মাদ্রাসায় অনেক আফগান ছাত্র পড়াশোনা করছে।
এই সফরকে ভারত এবং তালিবান শাসনের মধ্যে যোগাযোগ (communication)-এর নতুন দ্বার উন্মোচনের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভারত তালিবান সরকারের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ রেখেছে এবং মূলত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা (humanitarian aid)-এর উপর মনোযোগ দিয়েছে। মুত্তাকির এই সফর উভয় দেশের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে (confidence building) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রমাণ হতে পারে।
জাতিসংঘ থেকে পাওয়া অস্থায়ী ছাড়
উল্লেখ্য, মুত্তাকির এই সফর আগেই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) কর্তৃক আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (travel restrictions)-এর কারণে তাঁর সফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পরে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটি (sanctions committee) ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁকে ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত নয়াদিল্লি আসার জন্য অস্থায়ী ছাড় প্রদান করে।
এই ছাড়ের পর মুত্তাকির ভারত আগমন তালিবানের জন্যও একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য (diplomatic achievement) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্তরে যেখানে অধিকাংশ দেশ তালিবান শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি, সেখানে ভারত থেকে এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনা তালিবানের জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কে নতুন দিশা
মুত্তাকির এই সফরের ফলে আশা করা হচ্ছে যে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা (new dimension) আসবে। মে ২০২৫ সালে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S. Jaishankar) এবং মুত্তাকির মধ্যে হওয়া ফোন আলোচনার পর এই যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ভারত এখনও পর্যন্ত তালিবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি (official recognition) দেয়নি। তবে এটিও স্পষ্ট করেছে যে আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। ভারত সেখানে খাদ্যশস্য, ওষুধ এবং জরুরি সহায়তা সামগ্রী পাঠিয়েছে। মুত্তাকির এই সফর এই সহযোগিতাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপ দেওয়ার দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
তালিবান শাসনের প্রেক্ষাপট
২০২১ সালে আমেরিকান সেনা (US Forces)-দের প্রত্যাবর্তনের পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা আবারও তালিবানের হাতে চলে যায়। এই পরিবর্তন আফগান রাজনীতি (Afghan politics)-কে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। তালিবান শাসনকে এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে কিছু দেশ নিরাপত্তা এবং মানবিক উদ্বেগের (security and humanitarian concerns) কারণে যোগাযোগ বজায় রেখেছে।
জুলাই ২০২৫ সালে রাশিয়া (Russia) প্রথম দেশ হিসেবে তালিবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। ভারত এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি, কিন্তু মুত্তাকির এই সফর ইঙ্গিত দেয় যে নয়াদিল্লি ধীরে ধীরে কাবুলের সঙ্গে বাস্তবসম্মত (pragmatic) সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে এগোচ্ছে।