সংসদে বিতর্কের মাঝেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস সাংসদ কেসি বেণুগোপাল। বিলটিকে সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, নৈতিকতার কথা বলছে বিজেপি, অথচ যিনি আজ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি একসময় জেল খেটেছেন। তখন কি তাঁর নৈতিকতার কথা মনে পড়েনি?
শাহের প্রতি সরাসরি আঙুল
বেণুগোপাল আরও বলেন, নীতিশিক্ষা দেওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্বের উচিত নিজেদের অতীত পর্যালোচনা করা। অমিত শাহ গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন গ্রেফতার হয়েছিলেন—এই প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বিজেপির নৈতিকতার রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কংগ্রেস নেতার কথায়, বিজেপি আজ নৈতিকতার যে বুলি আওড়াচ্ছে, তা আসলে রাজনৈতিক মুখোশ ছাড়া কিছুই নয়।
শাহের কড়া জবাব
অমিত শাহও পাল্টা দিতে ছাড়লেন না। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ছিল মিথ্যা। আমি নিজে থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম, কারণ নৈতিকতার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। আদালত যতদিন না আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করেছে, আমি কোনও সরকারি পদে থাকিনি।’’ তাঁর বক্তব্যে এক প্রকার রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—বিজেপি নেতৃত্ব ‘নৈতিকতা’র প্রশ্নে আপস করে না।
আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ
শাহ উল্লেখ করেন, আদালতের রায়ে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আইনের আদালত যখন আমার সততা প্রমাণ করেছে, তখন সেই পুরনো অভিযোগ টেনে আনা শুধু রাজনৈতিক বিদ্বেষ।’’ কংগ্রেসকে নিশানা করে শাহ বলেন, বিরোধীরা মানুষের সামনে বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরতে চাইছে, অথচ সত্যিটা অন্য।
বিজেপির পাল্টা বার্তা
শাহের জবাবের পর বিজেপির অন্য নেতারাও সুর মেলান। তাঁদের দাবি, বিরোধীরা যখন যুক্তির অভাবে হোঁচট খায়, তখনই তারা অমিত শাহের অতীত জেলযাত্রার প্রসঙ্গ তোলে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে, আদালত তাঁকে নির্দোষ বলেছে। তাই এই ইস্যুতে কংগ্রেসের রাজনীতি জনমনে প্রভাব ফেলবে না।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে গুজরাটে একটি ভুয়ো এনকাউন্টার মামলায় অমিত শাহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বিরোধীরা তখন থেকেই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আদালতের রায়ে মুক্ত হওয়ার পর শাহের রাজনৈতিক উত্থান আরও তীব্র হয়েছে।
বিরোধী শিবিরের পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস আসলে বিজেপিকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় ফেলতে চাইছে। নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে তারা দেশের জনমনে সন্দেহ জাগাতে চায়। অমিত শাহের নাম টেনে এনে বিজেপির উপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও বাস্তবে এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মতভেদ রয়েছে।
শাহের আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি
অমিত শাহ তাঁর জবাবে যে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি দেখিয়েছেন, তা বিজেপির আগামীর কৌশলকে আরও স্পষ্ট করেছে। তিনি শুধু নিজের সাফাই দেননি, বরং নৈতিকতার প্রশ্নে বিজেপির অবস্থানও তুলে ধরেছেন। তাঁর দাবি, আমাদের দল কখনও নৈতিকতার পথ থেকে সরে যায়নি। আদালতের রায়ে আমি মুক্ত, আর সেই মুক্তির মধ্যেই আমার সততার প্রমাণ রয়েছে।
সংসদীয় বিতর্কের উত্তাপ
ঘটনা যেভাবে সংসদে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই ইস্যু শুধু এক দিনের ঝড় নয়। বিরোধীরা একে আগামী নির্বাচনের আগে প্রচারের হাতিয়ার করতে চাইছে। অন্যদিকে বিজেপি এই আক্রমণকে নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে নিতে চাইছে, যাতে শাহের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের তোপ শেষ পর্যন্ত উলটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই যায়।
জনমতের হিসাব-নিকাশ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ মানুষ আজ নৈতিকতার খোলস নয়, বরং বাস্তব কাজের হিসাবেই ভোট দেয়। শাহের জেলযাত্রা নিয়ে কংগ্রেস যতই কটাক্ষ করুক, আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর সেই অভিযোগের তীব্রতা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। তাই কংগ্রেসের এ আক্রমণ কতটা জনমনে সাড়া ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
কংগ্রেস সাংসদ কেসি বেণুগোপালের আক্রমণের মুখে সংসদে নিজের অতীত জেলযাত্রা নিয়ে অমিত শাহ খোলাখুলি জবাব দিলেন। মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে দাবি করে শাহ জানান, আদালত তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করেছে। তাই বিরোধীরা নৈতিকতার প্রশ্নে যতই চাপ তৈরি করতে চায়, বাস্তবে সেই ইস্যুতে শাহ ও বিজেপির আত্মবিশ্বাস অটুট।