দলের উপরে ব্যক্তি নন নেতৃত্বের প্রথম দিনেই শমীকের আত্মপরিচয়ের ঘোষণা

দলের উপরে ব্যক্তি নন নেতৃত্বের প্রথম দিনেই শমীকের আত্মপরিচয়ের ঘোষণা
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

বঙ্গ বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিলেন— এ লড়াই শুধু পদ-প্রতিপত্তির নয়, আদর্শের। তাঁর রাজনৈতিক ভাষ্য, শরীরীভাষা ও প্রতিটি বার্তায় স্পষ্ট— ব্যক্তি নয়, দলই প্রধান। একবিংশ শতকের ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির বাজারে তিনি তুলে ধরলেন এক ব্যতিক্রমী নজির। 'আমি' নয়, 'আমরা'— এই ধারণাই যে আগামী দিনে বিজেপিকে নতুনভাবে গড়ে তুলবে, তেমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

নিজের ছবি নয়, শুধু পদ্মচিহ্ন— দলকেই সামনে রাখলেন সভাপতি

মুরলিধর সেন লেনের দফতরে সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চ বদলে গেল রাতারাতি। যেখানে এতদিন থাকত নেতাদের ছবি, সেখানে এবার জায়গা করে নিয়েছে কেবলমাত্র বিজেপির পদ্মচিহ্ন। এটি নিছক ব্যাকড্রপের পরিবর্তন নয়, বরং দলের আদর্শগত এক পরিশুদ্ধতার সংকেত। শমীক ভট্টাচার্যের মতে, ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী, ভাবনা চিরস্থায়ী। এই ছবিহীন ব্যাকগ্রাউন্ডে তাই আদর্শই মুখ্য, নেতা নয়। বিজেপির মূলমন্ত্রকে বাস্তবে প্রয়োগের প্রথম অধ্যায় শুরু করলেন এভাবেই।

চিন্তাধারাই নেতা— রাজনীতির বাজারে নতুন দিশা খুঁজছেন শমীক

যেখানে একাধিক রাজনৈতিক দল নিজের নেতার মুখকেই প্রচারে মুখ্য করে তোলে, সেখানে শমীক ভট্টাচার্যর পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। তাঁর মতে, রাজনৈতিক প্রচারে চিন্তাধারাই মূল মুখ হওয়া উচিত, কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই তিনি চান, কর্মীরা দলীয় প্রতীকের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আদর্শই হোক নেতা— এই বার্তা নিয়েই ময়দানে নেমেছেন বিজেপির এই নয়া মুখ।

ভিআইপি কালচারে অনীহা, সাধারণ কর্মীদের নাগালেই থাকতে চান শমীক

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা গ্রহণের প্রস্তাব পেলেও তাতে রাজি হননি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর যুক্তি— নেতা যদি কর্মীদের নাগালের বাইরেই থাকেন, তবে দলে বিশ্বাসের সেতু তৈরি হয় কীভাবে? তাই কোনও রকম 'ভিআইপি ভাবনা' থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন তিনি। এই একান্ত মানবিক ও সংযুক্তির মনোভাবেই কর্মীদের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার বার্তা দিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির এই নতুন সেনাপতি।

পুরনো কর্মীদের ফেরাতে নিজেই রাস্তায়, নিজেই সংগঠক

বিজেপির বহু পুরনো কর্মী যাঁরা গত কয়েক বছরে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন, তাঁদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন শমীক। তিনি নিজেই জেলার পর জেলা ঘুরছেন, সরাসরি কথা বলছেন তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। অভিমানে দূরে থাকা পুরনো সৈনিকদের ফেরাতে শমীক বেছে নিয়েছেন একেবারে মাঠে নামার কৌশল। 'বৈঠকে নয়, মাঠেই বদল'— এই মন্ত্রেই নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে বঙ্গ বিজেপি।

জেলা সংগঠনই মূল ভরকেন্দ্র, দলকে ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পনায় শমীক

লোকসভা নির্বাচনে কিছু সাফল্য এলেও বহু জেলা সংগঠনই কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। সেই ঘাটতি মেটাতেই এখন ফোকাস জেলা সংগঠন পুনর্গঠনে। শমীক চাচ্ছেন পুরনো অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যমকে একত্রে মিশিয়ে নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে। কর্মীবান্ধব, পরামর্শভিত্তিক ও আদর্শনিষ্ঠ নেতৃত্বই হবে পরবর্তী পথনির্দেশিকা— এমনই বার্তা তিনি দিচ্ছেন প্রকাশ্যেই।

Leave a comment