উত্তর প্রদেশে ২০২৭-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ১৫৫টি হারা এবং জেতা আসনে বিশেষ কৌশল শুরু করেছে। দল বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
UP Election 2027: উত্তর প্রদেশে আসন্ন ২০২৭ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের কৌশলকে আরও জোরদার করেছে। ২০২২ সালের হারা এবং জেতা আসনগুলির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে প্রতিটি আসনে বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। দলীয় সূত্রের খবর, এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আসনে বিজেপির সংগঠনকে সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় ও শক্তিশালী করা।
বিশেষ করে, যে ১৫৫টি আসনে দল হেরেছে সেগুলোর উপর বিজেপির নজর সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে মইনপুরী, রায়বেরেলি এবং আজমগড়ের মতো জেলা, যেখানে সমাজবাদী পার্টি (সপা) এবং কংগ্রেসের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। দল এই আসনগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য স্তরের কর্মকর্তাদের সক্রিয় রেখেছে যাতে আসন্ন নির্বাচনে কোনো ত্রুটি না থাকে।
হারা আসনগুলির ৬টি শ্রেণী
বিজেপি হারা আসনগুলিকে ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করেছে, যাতে প্রতিটি আসনের জন্য আলাদা কৌশল তৈরি করা যায়।
শ্রেণী A - যে আসনগুলিতে বিজেপি ২০২২ সালে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এই আসনগুলিতে পান্না প্রমুখ এবং স্থানীয় কর্মীদের সক্রিয় করা হবে।
শ্রেণী B - যে আসনগুলিতে পার্টি তৃতীয় স্থানে ছিল। এখানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের রিপোর্ট তৈরি করা হবে এবং নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠক আয়োজন করা হবে।
শ্রেণী C - মইনপুরী, রায়বেরেলি এবং আজমগড়ের মতো আসন, যেখানে সপা বা কংগ্রেসের প্রভাব ঐতিহ্যগতভাবে রয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকবেন।
শ্রেণী D - যে আসনগুলি ২০২২ সালে হেরে গেলেও উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এখানে সেই দলই দায়িত্ব পালন করবে যারা উপনির্বাচনে সাফল্য এনেছিল।
শ্রেণী E - সহযোগী দলগুলির হারা আসন। এখানে বিজেপি এবং সহযোগী দল একসঙ্গে কৌশল তৈরি করবে।
শ্রেণী F - মুসলিম অধ্যুষিত আসন যেখানে পার্টি হেরেছে। এই আসনগুলিতে সংখ্যালঘু মোর্চার কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকবেন এবং বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হবে।
প্রতিটি শ্রেণীর জন্য আলাদা আলাদা কৌশল এবং দল তৈরি করা হয়েছে, যাতে স্থানীয় স্তরে শক্তিশালী সংগঠন স্থাপন করা যায়।
জেতা আসনগুলির জন্য ৪টি শ্রেণী
বিজেপি শুধু হারা আসনগুলিতেই নয়, জেতা আসনগুলিতেও বিশেষ পরিকল্পনা করেছে। জেতা আসনগুলিকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
শ্রেণী A - যে আসনগুলিতে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করা হয়েছে। পুরনো দলকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।
শ্রেণী B - যে আসনগুলি ২০১৭ সালে হেরেছিল কিন্তু ২০২২ সালে জিতেছে। এখানে বুথভিত্তিক বিশ্লেষণ করা হবে যে কোন জায়গাগুলিতে ২০১৭ সালে দুর্বল ফল হয়েছিল এবং ২০২২ সালে কতটা উন্নতি হয়েছে।
শ্রেণী C - এমন আসন যেখানে অন্য দলের নেতারা বিজেপির টিকিটে জয়লাভ করেছেন। এখানে প্রার্থী এবং দলের অবদানের শতকরা হার নির্ধারণ করা হবে।
শ্রেণী D - মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে জেতা আসন, যেমন রামপুর এবং কুন্দারকি। এইগুলোতে বিশেষ নজরদারি এবং আলাদা কৌশল প্রয়োগ করা হবে।
মিশন-২৭: বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠন মজবুত করা
বিজেপির মূল উদ্দেশ্য হল ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আসনে বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে সম্পূর্ণরূপে শক্তিশালী করা। দলীয় সূত্রের খবর, বিশেষ করে হারা আসনগুলোর উপর দলের জোর বেশি যাতে আগামীতে কোনো ত্রুটি না থাকে।
এর জন্য পার্টি স্থানীয় নেতা, কর্মকর্তা এবং কর্মীদের সক্রিয় রাখছে। প্রতিটি বুথে নিয়মিত বৈঠক, জনসংযোগ অভিযান এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। এর ফলে দলের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত হবে এবং দলের কৌশলকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
মইনপুরী, রায়বেরেলি এবং আজমগড়ের উপর বিশেষ মনোযোগ
বিজেপি মইনপুরী, রায়বেরেলি এবং আজমগড়ের ২০টি আসনকে বিশেষ ফোকাসে রেখেছে। এই এলাকাগুলো ঐতিহ্যগতভাবে সপা এবং কংগ্রেসের প্রভাবাধীন বলে মনে করা হয়। এখানে পার্টি কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের এবং কৌশলগত টিমের মাধ্যমে ক্রমাগত নজরদারি ও পরিকল্পনা করছে।
এই জেলাগুলোতে বুথভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচন করা হচ্ছে এবং স্থানীয় কর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। দলের বিশ্বাস, হারা আসনগুলিতে শক্তিশালী সাংগঠনিক প্রস্তুতি ২০২৭ সালের নির্বাচনে জয়ের ভিত্তি তৈরি করবে।
সাংগঠনিক বৈঠক এবং প্রশিক্ষণ
বিজেপি প্রতিটি শ্রেণীর আসনে নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠক আয়োজন করছে। এতে বুথ স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে জেলা এবং রাজ্য স্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এছাড়াও, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কর্মীদের কৌশলগত ধারণা বাড়বে এবং তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। দলের লক্ষ্য হল প্রতিটি বুথে দায়িত্বশীল এবং সক্রিয় টিম তৈরি করা, যাতে ভোটারদের কাছে দলের পরিকল্পনা এবং বার্তা সঠিক সময়ে পৌঁছায়।