ভারত সরকার সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে সিন্ধু জল চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদ এবং আলোচনা একসাথে চলতে পারে না, জল এবং রক্ত একসাথে বইতে পারে না।
নয়াদিল্লি: ভারতে বর্ষা কেবল ঋতু পরিবর্তন-এর প্রতীক নয়, এটি জীবন, শক্তি এবং নতুন সুযোগের বার্তাও নিয়ে আসে। এর বৃষ্টি নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে জল সম্পদকে শক্তিশালী করে এবং কৃষি থেকে শিল্প পর্যন্ত, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতি দেয়। যখন এই ঋতু স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় উৎসবের সাথে যুক্ত হয়, তখন এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
দেশাত্মবোধের চেতনা, উদ্ভাবন এবং নবীকরণের শক্তি মিলে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এই পরিবেশকে আরও উজ্জ্বল করে, যেখানে তিনি উন্নত ভারতের দিকে নাগরিকদের আকাঙ্খা এবং সরকারের প্রতিশ্রুতিগুলির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেন।
সংসদের বিশেষ বর্ষাকালীন অধিবেশন এবং সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতে বর্ষা কেবল বৃষ্টির মৌসুম নয়, এটি জীবন, শক্তি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি নদীগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং জল সম্পদের বিস্তার ঘটায়। যখন এই ঋতু স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের সাথে যুক্ত হয়, তখন দেশাত্মবোধের এক নতুন চেতনা সৃষ্টি হয়। লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণ শুধুমাত্র নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষাকে দিশা দেয় না, বরং "উন্নত ভারত @ ২০৪৭"-এর রূপরেখাও উপস্থাপন করে।
সংসদের বিশেষ বর্ষাকালীন অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী একে ভারতের গৌরবের অধিবেশন বলে অভিহিত করেন। এই সময় তিনি ভারতীয় সৈন্যদের বীরত্ব, অপারেশন সিন্দুরের সাফল্য এবং পাকিস্তান-স্পন্সরিত সন্ত্রাসবাদের উপর निर्णायक পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ভারতের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন।
সিন্ধু জল চুক্তি: ইতিহাস এবং বিতর্ক
সিন্ধু জল চুক্তি ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে সিন্ধু নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল। এতে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের মতো প্রধান নদী অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেগুলোর জল ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাটের শুষ্ক অঞ্চলে সেচ ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যেত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ভারত এই নদীগুলোর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেত, তবে কৃষি, পানীয় জল ও শিল্প পরিকাঠামোতে ব্যাপক উন্নতি হতে পারত এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে জল বিবাদও কম হতো।
কংগ্রেসের নীতি নিয়ে প্রশ্ন
লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি কংগ্রেসের নেহেরুভিয়ান কূটনীতির একটি বড় ভুল ছিল। সংসদে চুক্তিটি নিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টার আলোচনা হয়েছিল, যেখানে অনেক সাংসদ এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। তরুণ সাংসদ অটল বিহারী বাজপেয়ী তখন সতর্ক করেছিলেন যে, পাকিস্তানের অযৌক্তিক দাবি মানলে বন্ধুত্ব বাড়বে না। কংগ্রেসের অনেক সাংসদ যেমন হরিশ চন্দ্র মাথুর ও অশোক মেহতাও এই চুক্তির বিষয়ে গুরুতর আপত্তি জানিয়েছিলেন।
তা সত্ত্বেও, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বিরোধীদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেছিলেন। পরে নেহেরু নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, এই চুক্তি থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানও মনে করতেন যে এই চুক্তি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল না, তবে ভারত তার কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে এই ত্যাগ স্বীকার করেছে।
মোদী সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
এখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত এই ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের চেষ্টা করেছে। সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যতক্ষণ না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা বন্ধ করে, ততক্ষণ সিন্ধু জল চুক্তি কার্যকর করা হবে না। এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ:
- কৃষক ও নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা
- জল সম্পদের উপর ভারতের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ
- রাজ্যগুলোতে জল নিয়ে স্থায়ী সমাধান
- সেচ ও শিল্প বিকাশে নতুন দিশা
- জাতীয় নিরাপত্তা ও জল কূটনীতির নতুন অধ্যায়
মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ কেবল জল ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এটি জাতীয় নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ভারত এখন তার নদীর জল তার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবে। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকেও এই বার্তা দেয় যে ভারত আর কোনও প্রকার তোষণ নীতি গ্রহণ করবে না। জল ও নিরাপত্তা উভয় বিষয়েই ভারত এখন বিশ্ব মঞ্চে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।