আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (আরসিবি)-এর হয়ে খেলা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নিক মেডিনসন সম্প্রতি ক্যান্সারকে পরাজিত করে ক্রিকেটে ফিরে এসেছেন। মেডিনসন তাঁর যন্ত্রণাদায়ক যাত্রার কথা প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন যে কেমোথেরাপির সময় তাঁর জীবন কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
স্পোর্টস নিউজ: অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার নিক মেডিনসন একটি গুরুতর রোগকে পরাজিত করে মাঠে ফিরে এসেছেন। মেডিনসন প্রকাশ করেছেন যে তাঁর টেস্টিকুলার ক্যান্সার হয়েছিল, কিন্তু তিনি এই রোগকে হারাতে সফল হয়েছেন। তাঁর এই যাত্রা ছিল কষ্ট ও যন্ত্রণায় ভরা। মেডিনসন জানিয়েছেন যে সার্জারি এবং কয়েক সপ্তাহের কেমোথেরাপির পর তিনি ক্যান্সারকে পরাজিত করেন। মার্চ মাসে শেফিল্ড শিল্ডে খেলার সময় তাঁর পরীক্ষায় ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তাঁর টিউমার অপসারণের জন্য অপারেশন করা হয়।
ক্যান্সারের মোকাবিলা: ভয় এবং যন্ত্রণা
৩৩ বছর বয়সী মেডিনসন ক্রিকেট ডট কম ডট এউ-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তাঁর টেস্টিকুলার ক্যান্সার হয়েছিল, যা তাঁর পেটের লিম্ফ নোড এবং ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এই খবর শোনা তাঁর জন্য অত্যন্ত ভয়ানক ছিল। মেডিনসন বলেছেন, "যখন আমি জানতে পারলাম যে আমাকে কেমোথেরাপি নিতে হবে, সেটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। আমার ভয় ছিল যে আমি এটিকে অতিক্রম করতে পারব না।"
মেডিনসন জানিয়েছেন যে ক্যান্সারের প্রাথমিক পরীক্ষা সত্ত্বেও এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি ভক্ত এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে বার্তা দিয়েছেন যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করান, কারণ তাড়াতাড়ি ধরা পড়লেও রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কেমোথেরাপি: সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সপ্তাহ
মেডিনসনের সার্জারির পর তাঁকে কয়েক সপ্তাহের কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন যে কেমোথেরাপির নয় সপ্তাহ তাঁর জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেমোর সময় তাঁকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল, তবে এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিল। দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত তাঁর সমস্ত চুল পড়ে গিয়েছিল, যার ফলে মানসিক ও শারীরিক চাপ আরও বেড়ে যায়।
মেডিনসন বলেছেন, "আমি পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। মনে হতো, যদি সুযোগ পাই, তাহলে ২৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েই থাকব। রাত ১টায় ঘুমোতে যেতাম, কিন্তু সকাল ৬টা পর্যন্ত জেগে থাকতাম।" এই সময়টা মেডিনসনের জন্য শুধু শারীরিক নয়, মানসিক লড়াইয়েরও ছিল।
বাবা হলেন মেডিনসন: আনন্দের মুহূর্ত
কেমোথেরাপি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়েছিল এবং দুই মাস পর জানা যায় যে চিকিৎসা সফল হয়েছে। মেডিনসন ধীরে ধীরে ক্রিকেটে ফেরার দিকে পদক্ষেপ নেন। তিনি কেমোথেরাপির মাত্র দুই সপ্তাহ পর নেটে অনুশীলন শুরু করেন। মেডিনসনের প্রত্যাবর্তন তাঁর ভক্ত এবং ক্রিকেট জগতে নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে। তাঁর সংগ্রাম ও সাহস প্রমাণ করেছে যে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েও একজন ব্যক্তি তাঁর স্বপ্নের দিকে ফিরে আসতে পারেন।
এই কঠিন সময়ে মেডিনসন আনন্দের উপহারও পেয়েছিলেন। তিনি দ্বিতীয়বার বাবা হওয়ার আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন। মেডিনসন জানিয়েছেন যে এই সময়টি তাঁর জন্য আবেগগতভাবেও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি বলেছেন, "ক্যান্সারের মাঝে আমার পরিবার এবং বাচ্চাদের স্মৃতি আমাকে শক্তিশালী করেছে। এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। যদি আমি তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করাতাম এবং তারপরেও রোগ ছড়িয়ে পড়ত, তাহলে বুঝতে হবে যে এটি জীবনের অনিশ্চয়তার অংশ। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।"