দিল্লির যানজটের সমস্যা কারও অজানা নয়, বিশেষ করে দক্ষিণ দিল্লির এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন। এখন দিল্লি সরকার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। দক্ষিণ দিল্লির জন্য চারটি নতুন উড়ালপুল (Elevated Road) তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেগুলোর কাজ শীঘ্রই শুরু হতে পারে।
কোন রাস্তাগুলোতে উড়ালপুল তৈরি করা হবে?
দিল্লি সরকার যে চারটি প্রধান রাস্তাকে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা করেছে, সেগুলি হল –
- ছত্তরপুরের প্রধান রাস্তা থেকে এসএসএন মার্গ পর্যন্ত উড়ালপুল করিডোর
- ১০০ ফুট রোড থেকে ইগনু গেট পর্যন্ত ফ্লাইওভার সেকশন
- ইগনু রোডে নতুন ফ্লাইওভার
- অনু্রত মার্গ থেকে আইএনএ মার্কেট হয়ে আইজিআই এয়ারপোর্ট পর্যন্ত উড়ালপুল সংযোগ
এই প্রস্তাবগুলির উদ্দেশ্য হল সেই প্রধান রাস্তাগুলোর ওপর থেকে যানবাহনের চাপ কমানো, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলে এবং মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।
কোন এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে?
দক্ষিণ দিল্লির যে এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি যানজটের সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে ফ্রিডম ফাইটার্স এনক্লেভ, সৈনিক ফার্ম, নেব সরাই, পরিবেশ কমপ্লেক্স এবং সাইদুলাজাবের মতো এলাকাগুলি উল্লেখযোগ্য। এই কলোনিগুলোর বাসিন্দারা প্রায়শই সাকেত মেট্রো বা মালवीय নগরের মতো ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের দিকে যান এবং রাস্তায় ইগনু রোড হয়ে যান।
ইগনু রোডে সারাদিন প্রচুর যানজট থাকে এবং এই রাস্তাটি অনেক আবাসিক কলোনিকে যুক্ত করেছে। কিন্তু এখানে রাস্তাগুলো এত সরু যে অবৈধ দখল ও দোকানের কারণে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণেই পূর্ত দফতর (PWD) এই রাস্তাটিকে উড়ালপুল তৈরির কথা ভাবছে, যাতে ট্র্যাফিক সরাসরি ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেতে পারে এবং নিচের রাস্তা দিয়ে স্থানীয় যানবাহন চলাচল করতে পারে।
১০০ ফুট রোড এবং ইগনু গেট সেকশনে কেন ফ্লাইওভার জরুরি?
১০০ ফুট রোড এবং ইগনু গেট এলাকাটি দক্ষিণ দিল্লির একটি প্রধান জংশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন এখান দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে এবং এখান থেকে অনেক কলোনির রাস্তা বেরিয়েছে। এই কারণে এই এলাকাটি যানজটের হটস্পট হয়ে উঠেছে।
ফ্লাইওভার তৈরি হলে স্থানীয় এবং অন্যান্য গাড়ি আলাদা রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে। এতে শুধু যান চলাচলই স্বাভাবিক হবে না, ভ্রমণের সময়ও কমবে।
অনু্রত মার্গ থেকে আইজিআই এয়ারপোর্ট পর্যন্ত উড়ালপুল সংযোগের পরিকল্পনা কী?
দিল্লি সরকারের এই বড় প্রস্তাবের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং महत्वाकांक्षी প্রকল্পটি হল অনু্রত মার্গকে আইএনএ মার্কেট হয়ে আইজিআই এয়ারপোর্টের সাথে সংযোগকারী উড়ালপুল।
এই সংযোগটি দিল্লির সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে যারা দক্ষিণ দিল্লি থেকে বিমানবন্দরের দিকে যান। বর্তমানে মানুষকে এইমস, রিং রোড বা ধৌলা কুয়ার মতো ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। যদি এই উড়ালপুলটি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বিমানবন্দরে পৌঁছানো অনেক সহজ এবং দ্রুত হবে।
যদিও এই প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সাইট পরিদর্শন চলছে এবং মেট্রো লাইন ও আশেপাশের স্থানগুলোর কথা মাথায় রেখে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
পূর্ত দফতর (PWD) রিপোর্ট তৈরি করছে
দিল্লি সরকার পূর্ত দফতরকে (PWD) এই চারটি রাস্তার উপর বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। রিপোর্টে দেখা হবে কোথায় উড়ালপুল তৈরি করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব, কোন এলাকায় কত খরচ হবে এবং নির্মাণে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।
পূর্ত দফতর (PWD) এর আগেও ইগনু রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কংক্রিটের ডিভাইডার এবং রাস্তা চওড়া করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু এতে তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। এখন কর্মকর্তারা মনে করেন যে উড়ালপুলই একটি ভালো এবং স্থায়ী সমাধান হতে পারে।
রেহড়ি-পটরি (ঠেলাগাড়ি) এবং দোকানের কারণে যানজটের সবচেয়ে বড় সমস্যা
ইগনু রোড এবং তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে রাস্তার ধারে রেহড়ি-পটরি (ঠেলাগাড়ি) এবং দোকানের ছড়াছড়ি। এটাই কারণ যে রাস্তার ওপর গাড়ি চালানোর মতো জায়গাই থাকে না। অনেক জায়গায় তো পথচারীদের হাঁটারও জায়গা থাকে না।
সকাল ও সন্ধ্যায় এখানে গাড়ির লাইন লেগে যায়। বাস, অটো, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ই-রিকশা সবই একই রাস্তায় চলে, যার কারণে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে।
ছত্তরপুর থেকে ইগনু-র মধ্যে দূরত্ব অতিক্রম করা সহজ হবে
ছত্তরপুর এবং ইগনু রোডের মধ্যে যাতায়াতকারী মানুষদের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো সরাসরি এবং দ্রুত রাস্তা নেই। তাদের প্রায়শই কুতুব মিনার, সাকেত মেট্রো এবং অন্যান্য ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।
যদি এখানে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপুল করিডোর তৈরি হয়ে যায়, তাহলে এই দূরত্ব কয়েক মিনিটের মধ্যে অতিক্রম করা যাবে এবং হাজার হাজার যাত্রীর সুবিধা হবে।