অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জিএসটি সংস্কারের প্রস্তাব রাজ্যগুলির মন্ত্রীদের গোষ্ঠীর (GoMs) সামনে পেশ করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমান ৪টি হার কমিয়ে মূলত ৫% এবং ১৮% - এই দুটি শ্রেণিতে আনা হবে, যেখানে ক্ষতিকারক পণ্যগুলির উপর ৪০% বিশেষ হার প্রযোজ্য হবে। এই প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়ম পালন সহজ করবে, কিন্তু সরকারের রাজস্বে ঘাটতি হতে পারে।
জিএসটি সংস্কার: অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার রাজ্যগুলির মন্ত্রীদের গোষ্ঠীর (GoMs) সামনে জিএসটি সংস্কারের বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ করেছেন। এতে বর্তমান ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮% হার কমিয়ে ৫% এবং ১৮% - এই দুটি প্রধান শ্রেণিতে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্ষতিকারক পণ্যগুলির উপর ৪০% বিশেষ হার প্রয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে। বৈঠকে রেট যুক্তিসঙ্গত করা, বিমার উপর ট্যাক্স এবং ক্ষতিপূরণ সেস-এর মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে সরকারের বার্ষিক ₹৮৫,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে।
ট্যাক্স স্ল্যাবে পরিবর্তনের প্রস্তুতি
সরকার বর্তমানে চারটি জিএসটি স্ল্যাবে কর নেয়, যা হল ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই স্ল্যাবগুলি কমিয়ে প্রধানত দুটি স্ল্যাব - ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত পণ্যগুলির উপর ৪০ শতাংশ বিশেষ হার আরোপ করার প্রস্তাবও রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী এই পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, বর্তমান ট্যাক্স হারগুলির জটিলতা এবং নিয়ম পালনের অসুবিধা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন সংস্কারের ফলে ব্যবসায়ীরা সহজে ট্যাক্স দিতে পারবেন এবং প্রশাসনিক কাজকর্মও সরল হবে।
বৈঠক এবং আলোচনার বিষয়
অর্থমন্ত্রীর এই ভাষণ প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলেছিল। বৈঠকে রেট যুক্তিসঙ্গত করা, বিমা ক্ষেত্রের উপর ট্যাক্স এবং ক্ষতিপূরণ সেস-এর মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিমা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত GoM গোষ্ঠী স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমা প্রিমিয়ামের উপর জিএসটি হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। অন্যদিকে, ক্ষতিপূরণ সেস গোষ্ঠী তাদের প্রস্তাব দেবে, বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রে যেখানে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে।
রেট যুক্তিসঙ্গতকরণ গোষ্ঠীর দায়িত্ব
রেট যুক্তিসঙ্গতকরণ GoM-কে ট্যাক্স স্ল্যাবের সংশোধন, হারের সরলীকরণ এবং ডিউটি ইনভার্সনের মতো সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই গোষ্ঠীর পরবর্তী বৈঠক ২১শে আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে ব্যবসায়ী এবং রাজ্যগুলির উদ্বেগকে মাথায় রেখে পরিবর্তনের প্রস্তাব তৈরি করা হবে।
সম্ভাব্য রাজস্ব প্রভাব
এসবিআই রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি কার্যকর হলে সরকারের বার্ষিক প্রায় ৮৫,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। একই সময়ে, যদি নতুন হারগুলি ১লা অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪৫,০০০ কোটি টাকা কম হতে পারে।
জিএসটি সংস্কারের সময়সীমা
এই সংস্কারগুলি GoMs-এর অনুমোদন পাওয়ার পর জিএসটি কাউন্সিলের সামনে পেশ করা হবে। জিএসটি কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠক আগামী মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দীপাবলির মধ্যে জিএসটি সংস্কার কার্যকর করা হবে।
জিএসটি কার্যকর হওয়ার সময় গড় কার্যকর ট্যাক্স হার ছিল ১৪.৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হার কমে ১১.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। প্রস্তাবিত নতুন হারগুলি কার্যকর হলে গড় কার্যকর ট্যাক্স হার ৯.৫ শতাংশ পর্যন্ত আসতে পারে। এই পরিবর্তন ব্যবসায়িক খরচ কমাতে এবং পণ্য ও পরিষেবার দামের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জিএসটি সংস্কারে ব্যবসা সহজ হবে
অর্থমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে আরও জানান যে, জিএসটি সংস্কারের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ট্যাক্স হার কমানো নয়, বরং ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়মকানুন সরল করাও। নতুন প্রস্তাবের ফলে ব্যবসায়ীরা কম কাগজপত্র এবং সহজ রিটার্ন ফাইলিংয়ের সুবিধা পাবেন।
GoMs-এর বৈঠকে এও আলোচনা হয়েছে যে, নতুন সংস্কারগুলি রাজ্যগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে কার্যকর করা হবে। এর ফলে রাজ্যগুলির রাজস্ব এবং কেন্দ্রীয় রাজস্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে। সমস্ত রাজ্যের মন্ত্রীরা তাদের পরামর্শ দিয়েছেন এবং অর্থমন্ত্রী সেগুলি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।