ভারতে প্রতি বছর ২০শে আগস্ট সদ্ভাবনা দিবস পালিত হয়। এই দিনটি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পালিত হয়। ১৯৪৪ সালে আজকের দিনে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া রাজীব গান্ধী জাতীয় ঐক্য, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির प्रबल সমর্থক ছিলেন।
নয়াদিল্লি: ভারতে প্রতি বছর ২০শে আগস্ট সদ্ভাবনা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকীকে উৎসর্গীকৃত। ১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া রাজীব গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন আকস্মিকভাবে শুরু হয়েছিল যখন ১৯৮৪ সালে তাঁর মা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন। সেই সময় রাজীবের বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর এবং এত কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জনকারী তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে তরুণ নেতা।
আধুনিক ভারতের নির্মাতা
সদ্ভাবনা দিবসের উদ্দেশ্য হল জাতীয় ঐক্য, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে উৎসাহিত করা। রাজীব গান্ধীর পুরো রাজনৈতিক জীবন এই মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতের শক্তি তার বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের মধ্যে নিহিত। এই কারণে তাঁর জন্মবার্ষিকী সদ্ভাবনা দিবস হিসেবে পালিত হয়, যাতে প্রতিটি প্রজন্ম তাঁর অবদান এবং আদর্শকে স্মরণ করতে পারে।
রাজীব গান্ধীকে প্রায়শই ‘আধুনিক ভারতের নির্মাতা’ বলা হয়। তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগের গুরুত্ব অনেক আগেই উপলব্ধি করেছিলেন এবং ভারতে আইটি বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় দেশজুড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কের দ্রুত বিস্তার ঘটে এবং কম্পিউটার শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হয়। এই কারণেই আজ ভারত গ্লোবাল আইটি হাব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শিক্ষা সংস্কার এবং যুব শক্তি
১৯৮৬ সালে তাঁর সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করে। এটি উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজীব গান্ধী সবসময় যুবকদের জাতি গঠনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্বগুলির মধ্যে একটি ছিল ভোটাধিকারের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা, যা যুবকদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
রাজীব গান্ধী তাঁর সরল, আধুনিক ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর কার্যকালে ভারতের বিদেশ নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। তিনি বিশ্বকে এটা দেখাতে সফল হয়েছিলেন যে ভারত কেবল ঐতিহ্যের দেশ নয়, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া একটি রাষ্ট্র।
রাজীব গান্ধী জাতীয় সদ্ভাবনা পুরস্কার
তবে, রাজীব গান্ধীর কার্যকাল সম্পূর্ণরূপে বিতর্ক মুক্ত ছিল না। তাঁর শাসনকালে বোফর্স কেলেঙ্কারি তাঁর ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই কেলেঙ্কারি কংগ্রেস পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রভাবিত করেছিল, যার ফলস্বরূপ ১৯৮৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারের সম্মুখীন হতে হয়। তা সত্ত্বেও, তাঁর সমর্থকরা মনে করেন যে এই ঘটনা তাঁর অনেক সাফল্য ও সংস্কারমূলক পদক্ষেপকে আড়াল করে দিয়েছে।
রাজীব গান্ধীর স্মৃতিতে ১৯৯২ সালে কংগ্রেস পার্টি রাজীব গান্ধী জাতীয় সদ্ভাবনা পুরস্কারের সূচনা করে। এই পুরস্কার সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়, যাঁরা শান্তি, ঐক্য ও সম্প্রীতিকে উৎসাহিত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এই পুরস্কার আজও তাঁর আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
অসম, পাঞ্জাব ও শ্রীলঙ্কা নীতি
রাজীব গান্ধী তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের কার্যকালে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অসম ও পাঞ্জাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছিলেন। এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় শান্তি সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তও তাঁর কার্যকালে হয়েছিল, যদিও এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনাও হয়েছিল।
রাজীব গান্ধীর কার্যকাল সংক্ষিপ্ত হলেও, তাতে করা কাজগুলি আগামী দশকগুলিতে ভারতের দিকনির্দেশনা ঠিক করে দিয়েছে। তিনি যে তথ্য বিপ্লব ও প্রযুক্তিগত বিকাশের সূচনা করেছিলেন, সেটাই ভারতকে ডিজিটাল যুগে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। তাঁর চিন্তা সবসময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রযুক্তি ও শিক্ষাই ভারতকে আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী করতে পারে।