গাজায় যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। সিএনএন (CNN) এর মতে, এই হামলায় ৩০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনও বোমা হামলা চলছে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ: গাজায় যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) চুক্তি হওয়ার পরও ইসরায়েল বুধবার রাতে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। আমেরিকান মিডিয়া নেটওয়ার্ক সিএনএন (CNN) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, এই হামলাগুলো এমন সময় হয়েছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি চুক্তি (Peace Agreement) এর প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছিল। স্থানীয়দের বক্তব্য, বোমা হামলা এত আকস্মিকভাবে হয়েছে যে তারা বুঝতে পারেননি যুদ্ধবিরতির পরেও কেন বিস্ফোরণ হচ্ছে।
হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা, আহত শিশুদের আর্তনাদ
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালামিয়া জানিয়েছেন যে বুধবার সন্ধ্যা থেকে ক্রমাগত আহতদের আনা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। হাসপাতালে জায়গার অভাবে আহতদের চিকিৎসা বারান্দা এবং খোলা মাঠে করা হচ্ছে। গাজায় বিদ্যুৎ ও ওষুধের তীব্র অভাব রয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষ, উদ্ধারকার্যে অসুবিধা
গাজার বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে যে আল-সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক হামলার পর প্রায় ৪০ জনেরও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা রাতভর উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন, কিন্তু লাগাতার বোমা হামলার কারণে তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশু ও মহিলাদের বের করার চেষ্টা করছেন। একটি ক্লিপে একজন উদ্ধারকারীকে একটি ছোট শিশুকে ধুলো ও রক্তে মাখা অবস্থায় কোলে তুলে নিতে দেখা যায়।
ইসরায়েলের যুক্তি: হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) তাদের বিবৃতিতে বলেছে যে তারা হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন (Hamas Terror Group) এর ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই ঘাঁটিগুলো ইসরায়েলের সুরক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি (Immediate Threat) তৈরি করছিল। ইসরায়েল দাবি করেছে যে বেসামরিক এলাকাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি, বরং শুধুমাত্র সেই স্থানগুলিতে হামলা হয়েছে যেখান থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছিল। তবে, সিএনএন (CNN) ইসরায়েলের এই দাবিগুলির সত্যতা নিশ্চিত করেনি এবং জানিয়েছে যে স্বাধীনভাবে এর তদন্ত চলছে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা (Peace Plan)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছিলেন যে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি (Ceasefire Agreement) এবং শান্তি পরিকল্পনা (Peace Plan) এর প্রথম ধাপে সম্মতি হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে গাজায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং হামাস কর্তৃক আটককৃত জিম্মিদের (Hostages) মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছিলেন যে এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে (Middle East) স্থায়ী শান্তির দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হবে। কিন্তু এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই গাজায় হামলা শুরু হয়, যার ফলে চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার বৈঠক
বৃহস্পতিবার সকালে হোয়াইট হাউস (White House) এ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন যে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শীঘ্রই শুরু করা হবে। তিনি বলেন যে আমেরিকা উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং মানবিক সহায়তা (Humanitarian Aid) এর জন্য পথ খুলে দেবে। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে পরিস্থিতি এখনও নাজুক (Fragile) এবং উভয় পক্ষকেই সংযম বজায় রাখতে হবে।