৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান রকেট তৈরি করছে ইসরো

 ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান রকেট তৈরি করছে ইসরো

মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারত আরও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-এর চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে, ইসরো একটি নতুন রকেট তৈরি করছে, যার উচ্চতা ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান হবে।

নয়াদিল্লি: ইসরোর চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন মঙ্গলবার বড় ঘোষণা করে জানিয়েছেন যে, মহাকাশ সংস্থা এমন একটি বিশাল রকেট তৈরি করছে, যার উচ্চতা প্রায় ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান হবে। এই রকেটটি প্রায় ৭৫,০০০ কিলোগ্রাম (৭৫ টন) পেলোড পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (লো আর্থ অরবিট)-এ স্থাপন করতে সক্ষম হবে। তথ্য অনুযায়ী, লো আর্থ অরবিট পৃথিবী থেকে ৬০০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত, যেখানে সাধারণত যোগাযোগ এবং পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ স্থাপন করা হয়।

ভি. নারায়ণন এই নতুন রকেটটিকে ভারতের প্রথম রকেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ডঃ এ.পি.জে. আবদুল কালামের নেতৃত্বে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ভারতের প্রথম রকেটটি ছিল ১৭ টনের এবং সেটি মাত্র ৩৫ কেজি ওজন নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে (LEO) নিয়ে যেতে পারত। আজ আমরা ৭৫,০০০ কেজি ওজন বহনকারী রকেটের পরিকল্পনা করছি, যার উচ্চতা ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান হবে। এটি আমাদের অগ্রগতির গল্প বলে।

কেন এই রকেটটি বিশেষ?

এই নতুন রকেট ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক হবে।

  • ৭৫ টন ওজন ক্ষমতা: এটি যে কোনও দেশের জন্য একটি বড় কৃতিত্ব, কারণ এত পেলোড বহন করা অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল কাজ।
  • স্বদেশী প্রযুক্তির ব্যবহার: ইসরো এই রকেটে সম্পূর্ণরূপে স্বদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা ভারতের আত্মনির্ভরতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
  • বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি: আমেরিকা এবং ইউরোপের মহাকাশ সংস্থাগুলির মতো এখন ভারতও ভারী উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
  • কৌশলগত দৃঢ়তা: এই রকেট সামরিক যোগাযোগ, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ এবং নেভিগেশন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইসরোর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মিশন

ভারতের এই महत्वाकांक्षी রকেট প্রোজেক্ট এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইসরো একাধিক বড় মিশনে কাজ করছে।

  1. NAVIC স্যাটেলাইট: ভারতের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম, যাকে 'Navigation with Indian Constellation' (NAVIC) বলা হয়, তা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এই বছর ইসরো NAVIC স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে, যা ভারতের নিজস্ব GPS সিস্টেমকে আরও কার্যকরী করবে।
  2. GSAT-7R উপগ্রহ: ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ডিজাইন করা GSAT-7R যোগাযোগ উপগ্রহ শীঘ্রই উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি বর্তমান GSAT-7 (রুক্মিণী)-এর স্থান নেবে এবং সমুদ্র অঞ্চলে ভারতের নজরদারি ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
  3. টেকনোলজি ডেমোনস্ট্রেশন স্যাটেলাইট (TDS): এই উপগ্রহ ভবিষ্যতের মিশনগুলির জন্য নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা করবে। এই পরীক্ষা ভারতকে আরও উন্নত এবং জটিল মহাকাশ প্রকল্পের দিকে নিয়ে যাবে।
  4. মার্কিন যোগাযোগ উপগ্রহের উৎক্ষেপণ: ভারতের LVM3 রকেট এই বছর আমেরিকার AST SpaceMobile কোম্পানির ৬,৫০০ কেজি ওজনের ব্লক-২ ব্লুবર્ડ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। এই স্যাটেলাইট বিশ্বের স্মার্টফোনগুলিকে সরাসরি মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে সক্ষম হবে। এই মিশন ভারতের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
  5. মহাকাশ স্টেশনের পরিকল্পনা: ভি. নারায়ণন জানিয়েছেন যে ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারত ৫২ টন ওজনের মহাকাশ স্টেশন তৈরি করবে। এর পাশাপাশি ইসরো শুক্র গ্রহের জন্য অরবিটার মিশনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসরো আগে থেকেই নেক্সট জেনারেশন লঞ্চ ভেহিকেল (NGLV)-এর ওপর কাজ করছে, যেখানে প্রথম পর্যায়টি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হবে। নতুন ৪০ তলা রকেট এই দিকে আরও একটি বড় পদক্ষেপ साबित হতে পারে। এটি কেবল মহাকাশ মিশনের খরচ কমাবে না, বরং ভারতকে বিশ্ব বাজারে লঞ্চ সার্ভিসের একটি বড় খেলোয়াড় করে তুলবে।

Leave a comment