কর্মক্ষমতার মূল চাবিকাঠি ফ্যান
কম্পিউটারের ভেতরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলির মধ্যে ফ্যান অন্যতম। এই ছোট্ট পাখাটিই সিস্টেমকে ঠান্ডা রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন এর উপর ধুলো জমে যায়। ধুলো জমলেই সিস্টেম অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে, অকারণে শব্দ করে এবং কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে গেম খেলার সময় হোক বা গুরুত্বপূর্ণ অফিসের কাজ, মাঝপথে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই কয়েক মাস অন্তর ফ্যান পরিষ্কার রাখাটা আর বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি প্রয়োজন।
শাট ডাউন করাই প্রথম পদক্ষেপ
যেকোনও রকম পরিষ্কারের কাজ শুরুর আগে নিরাপত্তাই প্রথম। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ পুরোপুরি শাট ডাউন করে নেওয়া উচিত। ডেস্কটপ হলে পাওয়ার কেবল খুলে ফেলতে হবে। আর ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যাটারিটি খুলে রাখা আরও ভালো। এতে কোনও অঘটন বা বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি থাকে না। অনেকেই তাড়াহুড়ো করে এই ধাপ এড়িয়ে যান, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটাই আসল সুরক্ষার বর্ম।
কেস খোলার সময় বাড়তি সতর্কতা
ডেস্কটপ PC পরিষ্কার করতে হলে স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে ব্যাক কভার বা সাইড প্যানেল খুলতে হবে। তবে কাজটা করতে হবে খুবই সাবধানে। বেশি চাপ প্রয়োগ করলে বা হঠাৎ টান দিলে ভেতরের সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা প্রযোজ্য। বাজারে এখন বিশেষ ল্যাপটপ ক্লিনিং কিটও পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করলে কাজ আরও সহজ হয়।
ধুলোই বড় শত্রু
একবার কেস খোলা হলে বোঝা যাবে ফ্যানের আসল অবস্থা। পুরু ধুলোর আস্তরণ জমে থাকলে সেটিই সমস্যার মূল কারণ। ধুলো মুছতে একটি নরম ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কখনওই জোরে চাপ দিয়ে ব্রাশ চালানো উচিত নয়, কারণ এতে ফ্যানের ব্লেড ভেঙে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নরম ‘পেইন্ট ব্রাশ’-জাতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
সূক্ষ্ম কণা তাড়াতে কম্প্রেসড এয়ার
ফ্যানের ভেতরে এমন কিছু ধুলোকণা লুকিয়ে থাকে, যেগুলি ব্রাশ দিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এয়ার ব্লোয়ার বা কম্প্রেসড এয়ার স্প্রে ব্যবহারই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে—স্প্রে করার সময় ফ্যানটিকে আঙুল দিয়ে ধরে রাখতে হবে, যাতে সেটি ঘুরতে না শুরু করে। না হলে মোটরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মাইক্রোফাইবার কাপড়ের জাদু
ফ্যান পরিষ্কার হলেও যদি চারপাশে হালকা ধুলো থেকে যায়, তবে নরম মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করা উচিত। কাপড়টিকে সামান্য ভিজিয়ে ফ্যানের চারপাশ মুছে নিলে একেবারে চকচকে হয়ে ওঠে। তবে কাপড় ভিজিয়ে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন বেশি জল না থাকে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা ভেতরের সার্কিটে পৌঁছে গেলে উল্টে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সবকিছু আবার সঠিকভাবে আটকে দেওয়া জরুরি
পরিষ্কার কাজ শেষ হলে কেসটি আবার বন্ধ করে সমস্ত স্ক্রু টাইট করে দিতে হবে। অনেকে আলগা করে রাখেন, ফলে পরবর্তী সময়ে কাঁপুনি বা শব্দের সমস্যা হয়। তাই গুছিয়ে আটকে দেওয়ার পর সিস্টেম অন করলে বোঝা যাবে পরিবর্তন। কম্পিউটার আর শব্দ করবে না, গরমও হবে না, বরং আগের তুলনায় অনেক দ্রুত চলবে।
নিয়মিত অভ্যাসেই বাড়বে যন্ত্রের আয়ু
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩-৪ মাস অন্তর ফ্যান পরিষ্কার করার অভ্যাস করলে শুধু স্পিড বাড়বে না, বরং সিস্টেমের আয়ুও বাড়বে। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ঘনঘন খারাপ হবে না, ফলে মেরামতির খরচও অনেকটা কমবে। এই ছোট্ট অভ্যাস অনেক বড় সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
অফিস হোক বা বাড়ি, আজকের দিনে কম্পিউটার-ল্যাপটপ ছাড়া কাজ এগোনো প্রায় অসম্ভব। তাই এই যন্ত্রের যত্ন নেওয়াটাও সমান জরুরি। ফ্যান পরিষ্কার করার মতো ছোট কাজ অনেকেই এড়িয়ে যান, অথচ এটিই পারফরম্যান্স ধরে রাখার মূল রহস্য। নিয়মিত পরিষ্কার রাখলেই ল্যাপটপ নতুনের মতো চলবে, আর ব্যবহারকারীও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবেন।