বিহার নির্বাচন ২০২৫-এ AIMIM মহাজোট ত্যাগ করে RLJP, ASP, JJD-এর সাথে তৃতীয় ফ্রন্টের পরিকল্পনা করেছে। মুসলিম ভোট বিভাজন এনডিএ এবং মহাজোটের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, যা ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।
পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। রাজ্যের রাজনীতিতে এতদিন এনডিএ এবং মহাজোট (ইন্ডিয়া জোট)-এর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধরা হচ্ছিল, কিন্তু সম্প্রতি তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এবার নির্বাচনে নতুন কৌশল এবং জোটের কারণে ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
মহাজোট থেকে AIMIM-এর বিচ্ছিন্নতা
অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (AIMIM) মহাজোটের প্রতি হতাশ হয়ে তৃতীয় ফ্রন্টের দিকে পা বাড়িয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি আখতারুল ইমান স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তারা মহাজোটের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করবেন না এবং স্বাধীনভাবে নতুন জোট কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। AIMIM এই নতুন মোর্চায় রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি (RLJP), আজাদ সমাজ পার্টি (ASP) এবং তেজপ্রতাপ যাদবের জনশক্তি জনতা দল (JJD)-কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে।
মুসলিম ভোটের বিভাজন
বিহারের প্রায় ১৭ শতাংশ ভোটার মুসলিম, যাদের বেশিরভাগ ঐতিহ্যগতভাবে আরজেডি-কে ভোট দিয়ে আসছেন। AIMIM-এর সক্রিয়তায় সীমাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম ভোটের বিভাজন হতে পারে। সীমাঞ্চলে এমন ২৪টি আসন রয়েছে যেখানে AIMIM-এর শক্তিশালী জনভিত্তি রয়েছে। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে AIMIM এই অঞ্চলগুলিতে ৫টি আসনে জয়লাভ করে তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল। যদি AIMIM মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত না হয়, তবে এই ভোট বিভাজন পরোক্ষভাবে এনডিএ-কে সুবিধা দিতে পারে।
AIMIM-এর কৌশলগত মডেল
AIMIM বিহারে হায়দ্রাবাদ মডেল গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছে। এই মডেলের অধীনে, দলটি একজন হিন্দু প্রার্থীকে মেয়র করেছিল, যাতে সমস্ত সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দেওয়া যায়। এর উদ্দেশ্য হল মুসলিম এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটাররা একসঙ্গে জোটের জন্য প্রস্তুত হোক এবং তৃতীয় ফ্রন্টকে শক্তিশালী করা যায়।
অন্যান্য দলের সক্রিয়তা
বিহারের তৃতীয় ফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য দলও তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যস্ত। বহুজন সমাজ পার্টি (BSP) একাই নির্বাচনে লড়ছে, যা দলিত ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টিও স্বাধীনভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এছাড়াও, আম আদমি পার্টি (AAP) সমস্ত ২৪৩টি বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। এই দলগুলির সক্রিয়তা নির্বাচনকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং ত্রিমুখী করে তুলছে।
তৃতীয় ফ্রন্টের কৌশল
AIMIM, RLJP, ASP এবং JJD-এর জোট বিহারের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের ফলে শুধু মুসলিম ভোটের বিভাজনই হবে না, এটি এনডিএ এবং মহাজোটের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যদি তৃতীয় ফ্রন্ট কার্যকরভাবে সক্রিয় হয়, তবে নির্বাচনের ফলাফল অপ্রত্যাশিত দিকে মোড় নিতে পারে।
ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি
বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ এনডিএ, মহাজোট এবং তৃতীয় ফ্রন্টের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। এই ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের কৌশল এবং প্রচার অভিযান আরও শক্তিশালী করতে হবে। এনডিএ-কে এবার মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের উপর নজর রাখতে হবে, অন্যদিকে মহাজোটকে তাদের ঐতিহ্যবাহী ভোট ব্যাঙ্ককে শক্তিশালী করা জরুরি হবে।