বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তন্যদানকারী মায়েদের তৈলাক্ত, ভাজা, মশলাদার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত ক্যাফিন, অ্যালকোহল এবং কিছু ভেষজও মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ের ক্লান্তি কমাতে এবং দুধের সরবরাহ বজায় রাখতে পর্যাপ্ত জল এবং স্বাস্থ্যকর তরল পান করা জরুরি।
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য খাদ্য বিষয়ক টিপস: স্তন্যদানকারী মায়েদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট এবং হেলথ কোচ ডঃ নিধি নিগমের মতে, স্তন্যদানকারী মহিলাদের তৈলাক্ত, ভাজাভুজি, মশলাদার এবং প্যাকেটজাত খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত। অতিরিক্ত ক্যাফিন, অ্যালকোহল এবং কিছু ভেষজ দুধের গুণমান এবং সরবরাহকে প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত জল, নারকেল জল এবং ভেষজ পানীয় পান করলে মা হাইড্রেটেড থাকেন এবং শিশুকে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
ভাজা এবং মশলাদার খাবার খাবেন না
ডঃ নিধি নিগম বলেন যে স্তন্যদানকারী মায়েদের ভাজা এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই খাবার হজম হতে কঠিন এবং হজম প্রক্রিয়াকে খারাপ করতে পারে। যখন মায়ের হজমের সমস্যা হয়, তখন এর প্রভাব শিশুর উপরও পড়তে পারে। এছাড়াও, এই ধরনের খাবার গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্যাকেটজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন
আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পাওয়া যায়। এগুলোতে প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম ফ্লেভারের পরিমাণ বেশি থাকে। স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য এই ধরনের পণ্য ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো মায়ের শরীরে প্রভাব ফেলে, পাশাপাশি দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও ক্ষতিকারক উপাদান পৌঁছাতে পারে।
চা এবং কফি বেশি পান করবেন না
ক্যাফিন মা এবং শিশু উভয়ের উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডঃ নিগম বলেন যে চা এবং কফি বেশি পান করলে স্তন্যদানের সময় ক্ষতি হতে পারে। বেশি ক্যাফিন গ্রহণ করলে শিশুর মধ্যে বিরক্তি, ঘুমের অভাব এবং অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এই কারণে স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্যাফিন গ্রহণ সীমিত রাখা উচিত।
মায়ের খাবারই শিশুর পুষ্টি
বিশেষজ্ঞদের মতে, মা যা খায় তার সরাসরি প্রভাব দুধের উপর পড়ে। সেই দুধ শিশুর শরীরে যায় এবং তার শক্তির উৎস হয়। সেজন্য মায়ের খাবার পরিষ্কার, সুষম এবং পুষ্টিকর হওয়া উচিত। যদি মা তার খাবারে সতর্কতা অবলম্বন করেন, তবে শিশুও সম্পূর্ণ পুষ্টি পাবে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে।
অ্যালকোহল এবং কিছু ভেষজও ক্ষতিকর
স্তন্যদানকারী মায়ের অ্যালকোহল থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকা উচিত। অ্যালকোহল মায়ের দুধের মাধ্যমে সরাসরি শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে এবং তার স্বাস্থ্য খারাপ করতে পারে। এছাড়াও, কিছু ভেষজ এবং ওষুধ যেমন অতিরিক্ত পরিমাণে সেজ বা পেপারমিন্ট দুধের সরবরাহ কমাতে পারে। যদি মা এগুলো গ্রহণ করেন, তবে দুধ কম তৈরি হতে পারে এবং শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি নাও পেতে পারে।
হাইড্রেটেড থাকা জরুরি
স্তন্যদানের সময় মায়ের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল ব্যবহৃত হয়। তাই জল পান করা খুবই জরুরি। মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, নারকেল জল, স্যুপ এবং ভেষজ পানীয় পান করা উচিত। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং দুধের সরবরাহও স্থিতিশীল থাকে। হাইড্রেটেড থাকলে মায়ের ক্লান্তি কমে এবং শিশুও সঠিক পরিমাণে দুধ পায়।
শিশুর স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব
ডাক্তারদের মতে, অনেক সময় মায়েরা ছোটখাটো ভুল করেন, যার সরাসরি প্রভাব শিশুর উপর পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মা বেশি মশলাদার বা তৈলাক্ত খাবার খান, তবে শিশুর পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। একইভাবে, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল সেবন করলে শিশুর ঘুম এবং স্বাস্থ্য দুটোই প্রভাবিত হয়।
সুষম আহারই সবচেয়ে বড় ভরসা
স্তন্যদানের সময় মায়ের আরও বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন। এই সময় শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। সুষম আহার, হাইড্রেশন এবং সঠিক জীবনযাপনই মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত এই বিষয়ে জোর দেন যে মা যা খায় তা সরাসরি শিশুর কাছে যায়। তাই খাবার এবং পানীয়ের অভ্যাস খুব ভেবেচিন্তে নির্বাচন করা উচিত।