তেল ছেড়ে এআই ও এফএমসিজি-তে মুকেশ আম্বানির বড় বাজি: আগামী ৫ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্বের লক্ষ্য

তেল ছেড়ে এআই ও এফএমসিজি-তে মুকেশ আম্বানির বড় বাজি: আগামী ৫ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্বের লক্ষ্য

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এখন তেল থেকে সরে এসে এআই (AI) এবং এফএমসিজি (FMCG) সেক্টরে বড় বাজি ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আরসিপিএল (RCPL) আগামী ৫ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্বের লক্ষ্য রেখেছে, যেখানে রিলায়েন্স মেটা (Meta) এবং গুগল (Google)-এর সঙ্গে যৌথভাবে জামনগরে উচ্চ-প্রযুক্তির পরিকাঠামো তৈরি করছে।

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আরআইএল (RIL) এজিএম (AGM)-এ মুকেশ আম্বানি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কোম্পানি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এবং এফএমসিজি (FMCG) সেক্টরের উপর মনোযোগ দেবে। এফএমসিজি ব্যবসার জন্য আরসিপিএল (RCPL) আগামী ৫ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে। অন্যদিকে, এআই (AI) সেক্টরে রিলায়েন্স মেটা (Meta) এবং গুগল ক্লাউড (Google Cloud)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে জামনগরে এআই (AI) ক্লাউড জোন তৈরির ঘোষণা করেছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই কৌশল রিলায়েন্সকে জিও (Jio) এবং রিটেলের (Retail) মতো একটি নতুন বৃদ্ধির ইঞ্জিন দিতে পারে।

রিলায়েন্সের এফএমসিজি (FMCG) কোম্পানির লক্ষ্য

রিলায়েন্স কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড অর্থাৎ আরসিপিএল (RCPL) বর্তমানে কোম্পানির নতুন বাজি। বর্তমানে এর বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ১১,৫০০ কোটি টাকা। কোম্পানি লক্ষ্য রেখেছে যে আগামী পাঁচ বছরে এটি বাড়িয়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। এটি প্রায় নয় গুণ লাফ হবে। যদি এই লক্ষ্য পূরণ হয়, তবে আরসিপিএল (RCPL) দেশের বৃহত্তম এফএমসিজি (FMCG) কোম্পানি হয়ে উঠতে পারে।

তেল ছাড়িয়ে নতুন দিগন্ত

মুকেশ আম্বানি সব সময় রিলায়েন্সকে নতুন পথে চালিত করেছেন। প্রথমে টেলিকম (Telecom) সেক্টরে জিও (Jio) এনে তিনি পুরো বাজারের চেহারা বদলে দিয়েছেন। এখন তাঁর নজর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এবং এফএমসিজি (FMCG)-এর দিকে। মনে করা হচ্ছে, এই দুটি ক্ষেত্রে তিনি সব মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বড় বিনিয়োগ করতে চলেছেন।

ক্যাম্পা কোলা (Campacola) থেকে জোরালো সাড়া

রিলায়েন্স বাজারে ক্যাম্পা কোলা (Campacola) ব্র্যান্ডটি নিয়ে আসার পর অনেকেই ভেবেছিলেন যে কোক (Coke) এবং পেপসি (Pepsi)-এর মতো বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ হবে না। কিন্তু ক্যাম্পা কোলা (Campacola) অনেক রাজ্যে ডাবল ডিজিট মার্কেট শেয়ার (Market Share) অর্জন করেছে। ছোট শহর এবং মফস্বল এলাকাগুলিতে এর প্রভাব ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।

রিলায়েন্সের ইন্ডিপেন্ডেন্স (Independence) ব্র্যান্ডটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিস তৈরি করে। এই ব্র্যান্ডটি ইতিমধ্যেই ১০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ বিষয় হল, এই ব্র্যান্ডটি এখন ভারতের বাইরেও যাচ্ছে। কোম্পানি এটি মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং পশ্চিম আফ্রিকার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আগামী ১২ মাসের মধ্যে এটি ২৫টি দেশে তাদের পণ্য বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে।

১০ লক্ষের বেশি দোকানে পৌঁছানো

রিলায়েন্স কনজিউমার প্রোডাক্টস (Reliance Consumer Products) এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষের বেশি দোকানে তাদের উপস্থিতি তৈরি করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছোট মুদি দোকান এবং খুচরা দোকান। কোম্পানির লক্ষ্য হল আগামী কয়েক বছরে এই নেটওয়ার্ক আরও দ্রুত বাড়ানো। এর পাশাপাশি, কোম্পানি ৩ বছরে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেগা ফুড পার্ক (Mega Food Park) তৈরি করতে চলেছে। এগুলি থেকে বড় আকারে উৎপাদন হবে এবং এফএমসিজি (FMCG) ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়বে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (Artificial Intelligence) বড় বাজি

এফএমসিজি (FMCG)-এর পাশাপাশি, রিলায়েন্স এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ক্ষেত্রেও প্রবেশ করছে। রিলায়েন্স ইন্টেলিজেন্স (Reliance Intelligence) নামে কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী এআই (AI) প্রকল্প তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর জন্য দুটি বড় কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করা হয়েছে।

মেটা (Meta) এবং গুগল (Google)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব

রিলায়েন্স মেটা (Meta)-এর সঙ্গে ৭০:৩০ অনুপাতে একটি যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture) করেছে। এতে প্রাথমিক বিনিয়োগ হবে ১০ কোটি ডলার। এই চুক্তিটি ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সম্পন্ন হতে পারে। এছাড়াও, গুগল ক্লাউড (Google Cloud)-এর সাথে অংশীদারিত্ব করে গুজরাটের জামনগরে একটি উচ্চ-প্রযুক্তির এআই-কেন্দ্রিক (AI-centric) ক্লাউড জোন (Cloud Zone) তৈরি করা হচ্ছে।

এআই (AI) প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ কম্পিউটিং পাওয়ারের প্রয়োজন। তথ্য অনুযায়ী, ১ গিগাওয়াট (Gigawatt) ডেটা সেন্টার (Data Center) চালানোর জন্য ৬,৭৮,০০০ বি১০০ (B100) চিপের প্রয়োজন হবে। যদি রিলায়েন্স শুরুতে ২০০ মেগাওয়াট (Megawatt) ব্যবহার করে, তবে প্রায় ১,৩৫,০০০ চিপের প্রয়োজন হবে। আগামী ৪ থেকে ৫ বছরে সম্পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছানোর জন্য ১.৩ গিগাওয়াট (Gigawatt) বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।

Leave a comment