মহীশূর দশেরার বিতর্ক সুপ্রিম কোর্টে: বানু মুশতাককে প্রধান অতিথি করা নিয়ে আবেদন

মহীশূর দশেরার বিতর্ক সুপ্রিম কোর্টে: বানু মুশতাককে প্রধান অতিথি করা নিয়ে আবেদন

কর্ণাটক সরকার মহীশূর দশেরায় বুকার পুরস্কার বিজয়ী বানু মুশতাককে প্রধান অতিথি করেছে। ঐতিহ্য লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে রয়েছে।

নয়াদিল্লি: কর্ণাটকের বিখ্যাত মহীশূর দশেরা এবার শুধু তার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের জন্য নয়, একটি বড় বিতর্কের কারণেও শিরোনামে রয়েছে। কর্ণাটক সরকার বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা বানু মুশতাককে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া দশেরা উৎসবের উদ্বোধনের প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক গভীর হচ্ছে এবং বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।

কোথা থেকে বিতর্কের সূত্রপাত?

মহীশূর দশেরা, যা "নাডা হাব্বা" অর্থাৎ রাজ্যের উৎসব নামে পরিচিত, প্রতি বছর মহা ধুমধাম করে পালিত হয়। এই আয়োজন চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়, যেখানে দেবীর মূর্তির উপর পুষ্পবৃষ্টি এবং বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা-অর্চনা করা হয়।

আবেদনকারীদের অভিযোগ যে, এই সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী পূজা হতে পারে। তাদের বক্তব্য, কোনো অ-হিন্দু ব্যক্তি এতে অংশ নিলে তা ঐতিহ্যের লঙ্ঘন হবে। এই যুক্তিতেই বানু মুশতাককে প্রধান অতিথি করার বিরোধিতা শুরু হয়।

আবেদনে কী বলা হয়েছে?

আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছেন যে, চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে যে আচার-অনুষ্ঠানগুলি হয় তা "আগমিক ঐতিহ্য" অনুসারে পরিচালিত হয়। এই ঐতিহ্য অনুযায়ী, পূজা, দীপ প্রজ্জ্বলন এবং ফল-ফুল অর্পণ কেবল হিন্দুরাই করতে পারেন। তাদের বক্তব্য, এটি সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষিত একটি ধর্মীয় প্রথা এবং এতে অন্য কোনো ধর্মের ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল।

আবেদনকারীরা এই অভিযোগও করেছেন যে, বানু মুশতাকের কিছু পুরনো মন্তব্য হিন্দু ধর্ম এবং কন্নড় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, তার নির্বাচন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মানজনক।

হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করেছিল

এর আগে কর্ণাটক হাইকোর্টেও এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বিজেপি-র প্রাক্তন সাংসদ প্রতাপ সিমহা সহ অনেকে চারটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন।

কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সমস্ত আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতের বক্তব্য ছিল যে, আবেদনকারীরা প্রমাণ করতে পারেননি যে বানু মুশতাককে প্রধান অতিথি করায় কোনো আইন বা সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, যেকোনো ধর্মের ব্যক্তিকে এই ধরনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো সম্পূর্ণরূপে সাংবিধানিক।

এখন সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদনকারী এইচ.এস. গৌরব সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ, যেখানে প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রন রয়েছেন, তারা মামলার জরুরি শুনানির জন্য সম্মতি দিয়েছেন। শুনানি আজ অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, কারণ উৎসব ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা।

আবেদনকারীদের যুক্তি, এটি কেবল একটি সরকারি আয়োজন নয়, বরং ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলির সাথে সম্পর্কিত একটি উৎসব। তাই এই ঐতিহ্যে কোনো অ-হিন্দুর অংশগ্রহণ সঠিক নয়।

কর্ণাটক সরকারের সপক্ষে যুক্তি

কর্ণাটক সরকার তাদের সিদ্ধান্তের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে যে, মহীশূর দশেরা কেবল একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং রাজ্যের একটি জনসাধারণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারের যুক্তি যে, এই অনুষ্ঠানে যেকোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে প্রধান অতিথি করা যেতে পারে।

সরকার আরও বলেছে যে, বানু মুশতাক কেবল একজন লেখিকা নন, তিনি একজন আইনজীবী এবং সমাজকর্মীও। তাকে এর আগেও অনেক সরকারি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাই তার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা সঙ্গত নয়।

Leave a comment