মার্কিন শুল্ক ২৫% থেকে ১০-১৫% কমার সম্ভাবনা: ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সুসংবাদ

মার্কিন শুল্ক ২৫% থেকে ১০-১৫% কমার সম্ভাবনা: ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সুসংবাদ

আমেরিকা ভারতের উপর ২৫% শুল্ক কমিয়ে ১০-১৫% করতে পারে। এতে বস্ত্র, রসায়ন এবং গহনা খাতগুলি স্বস্তি পাবে। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত সম্ভব।

ট্রাম্প শুল্ক: ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমেরিকান প্রশাসন শীঘ্রই ভারতীয় পণ্যগুলির উপর আরোপিত ২৫% পেনাল্টি শুল্ক প্রত্যাহার এবং রেসিপ্রোকাল শুল্ক ১০-১৫% এ কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি এটি হয়, তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য এটি দ্বিগুণ স্বস্তি এনে দেবে এবং আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার বড় মন্তব্য

ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (CEA) ভি. অনন্ত নাগেশ্বরন বলেছেন যে আমেরিকা শীঘ্রই ভারতীয় পণ্যের উপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করতে পারে। এছাড়াও, রেসিপ্রোকাল শুল্ক, যা বর্তমানে ২৫% আছে, তা ১০ থেকে ১৫% এর মধ্যে আনা হতে পারে। নাগেশ্বরন আশা প্রকাশ করেছেন যে আগামী ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে এবং ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে

নয়া দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি (Trade Agreement) নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি দিল্লিতে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়েছে। যদিও এই আলোচনাটি আনুষ্ঠানিক (Official) ছিল না, তবে উভয় পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে যে এই বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি (India-US Trade Deal) নিয়ে একটি বড় ঘোষণা হতে পারে।

কোন খাতগুলিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে

আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং ভারতের প্রায় ৫৫% রপ্তানি উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে।

  • বস্ত্র শিল্প (Textile Industry)
  • রসায়ন (Chemicals)
  • সামুদ্রিক খাবার (Seafood)
  • রত্ন ও গহনা (Gems & Jewellery)
  • যন্ত্রপাতি (Machinery)

এগুলির উপর উচ্চ শুল্ক গত কয়েক মাসে ভারতের রপ্তানিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। আগস্ট মাসে আমেরিকার কাছে ভারতের রপ্তানি কমে ৬.৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর।

আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার

ভারতের প্রায় ২০% রপ্তানি আমেরিকায় হয়। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ভারত আমেরিকায় ৮৬.৫১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ৪০.৮২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড করেছে।

যদি আমেরিকা শুল্ক কমায় এবং পেনাল্টি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়, তবে ভারতের রপ্তানিকারকরা বড় স্বস্তি পাবে। এটি কেবল ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না বরং উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কও মজবুত করবে।

ট্রাম্প জানালেন ভারতের উপর শুল্ক আরোপের কারণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে তিনি কেন ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

ট্রাম্প বলেছেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য তিনি বৈশ্বিক তেলের দামের উপর একটি কৌশল তৈরি করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস যে যদি বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে, তবে রাশিয়া আপস করতে বাধ্য হবে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

ট্রাম্প এবং মোদীর সম্পর্ক

তবে ট্রাম্প এও বলেছেন যে তিনি ভারতের খুব কাছাকাছি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জন্মদিনে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের জন্য কী সুবিধা হবে

যদি আমেরিকা সত্যিই শুল্ক ১০-১৫% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়, তবে ভারত অনেকভাবে লাভবান হবে।

  1. রপ্তানি বাড়বে – ভারতীয় পণ্য আমেরিকায় সস্তা হবে এবং তাদের চাহিদা বাড়বে।
  2. কর্মসংস্থানের সুযোগ – রপ্তানি শিল্পে কর্মরতদের জন্য নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
  3. বাজারে স্থিতিশীলতা – দীর্ঘদিনের শুল্ক বিতর্ক শেষ হবে এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হবে।
  4. দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মজবুত হবে – আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব আরও গভীর হবে।

Leave a comment