আজকের ব্যস্ত জীবনে মানুষ প্রায়ই খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করেন না। খাদ্যাভ্যাসের দোষেই পেটে গরম বা জ্বালাপোড়া শুরু হয়। সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয় অতিরিক্ত মশলাদার, তেলমাখা বা ভারী খাবার খেলে। পেটের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, ফলে পেট ভারী লাগে, গ্যাস তৈরি হয়, আলগা বা দ্রুত হজমের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় ব্যথা এবং অস্বস্তিও সঙ্গে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।
পেটের গরমের বিপদ: কখন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন
পেটের গরম বা উষ্ণতা দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন অম্লতা বেড়ে যাওয়া, হার্টবার্ন, খাবার হজম না হওয়া, এবং এমনকি হজমজনিত ব্যথা। কখনও কখনও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যদি হঠাৎ করে পেটের অতিরিক্ত গরম বা ব্যথা শুরু হয়। ডাক্তাররা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে খাবারের তালিকা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে পেটের গরম কমানো সম্ভব।
মশলাদার খাবার: যতটা খাচ্ছেন, ততটা গরম পাচ্ছেন
মশলাদার খাবার যেমন লঙ্কা, মরিচ, গরম মসলা পেটে তাপ তৈরি করে। এটি হজম প্রক্রিয়ায় চাপ সৃষ্টি করে। যারা অধিকাংশ সময় মশলাদার খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে পেটের গরম বাড়তে থাকে। বিশেষ করে রাতের খাবারে অতিরিক্ত মশলা পেলে হজমের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই পেটের উষ্ণতা কমাতে মশলাদার খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
তেল ও ঘি: খাবারের মান নয়, পরিমাণই ক্ষতিকর
অতিরিক্ত তেল, ঘি বা ভাজাপোড়া খাবারও পেটের গরমের বড় কারণ। এগুলি হজমের জন্য সময় নেয়, ফলে পেটে চাপ তৈরি হয় এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। যারা নিয়মিত তেলযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত, তাদের পেটে জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি বেশি থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ হলো, তেল ও ঘি যতটা সম্ভব কম খাওয়া এবং বেকড বা হালকা রান্না করা খাবার বেছে নেওয়া।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল: স্নেহ নয়, ক্ষতি বেশি
কফি, চা বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বেশি খেলে পেটের গরম বেড়ে যায়। ক্যাফেইন হজম প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং অ্যাসিডিটি বাড়ায়। এছাড়া অ্যালকোহলও পেটে জ্বালাপোড়ার কারণ। অ্যালকোহল গ্রহণ করলে পাচনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে পেটের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। তাই পেট ঠান্ডা রাখতে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কমানো জরুরি।
ভারী খাবার ও ফাস্ট ফুড: স্বল্পসময়ে আনন্দ, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি
ভারী খাবার ও ফাস্ট ফুড খেলে পেটে চাপ সৃষ্টি হয়। এগুলি হজমের জন্য দীর্ঘ সময় নেয় এবং পেটের উষ্ণতা বাড়ায়। ফাস্ট ফুডে প্রচুর তেল, মসলা ও প্রিজারভেটিভ থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভারী ও ফাস্ট ফুডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
ঠান্ডা খাবার: পেটের গরম কমানোর সহজ উপায়
যদি পেটে জ্বালাপোড়া বা গরম অনুভব করেন, তখন ঠান্ডা খাবার বা পানীয় উপকারী। যেমন ঠান্ডা দুধ, কলা, শসা, দই, মৌরি বা সেদ্ধ ভাত। এগুলি পেটের উষ্ণতা কমায় এবং হজম সহজ করে। পেটের অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এই ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।