হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিকে পিঠোরী অমাবস্যা বলা হয়। এই দিনটি সম্পূর্ণরূপে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই তিথিতে শ্রাদ্ধ, তর্পণ ও দান করলে পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। ভারতের অনেক অঞ্চলে এটিকে কুশोत्পাটিনী অমাবস্যাও বলা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে পিতৃপুরুষদের পিণ্ডদান ও তর্পণ করলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে। এছাড়াও, নদীতে স্নান এবং দান-পুণ্য করা পাপ থেকে মুক্তি এবং ইচ্ছাপূরণের পথ প্রশস্ত করে।
এই তিথির তাৎপর্য শুধুমাত্র পিতৃপুরুষদের পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সম্পর্ক দেবী দুর্গা এবং তাঁর ৬৪ রূপের আরাধনার সঙ্গেও জড়িত। বিশ্বাস করা হয় যে পিঠোরী অমাবস্যার ব্রত সন্তান লাভ এবং তাদের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে ফলদায়ক। বিবাহিত মহিলারা এই দিনে আটা দিয়ে দেবী-দেবতাদের মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন এবং ব্রত রাখেন। এই কারণেই এটিকে পিঠোরী অমাবস্যা বলা হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিনটি কেবল পিতৃপুরুষদের সন্তুষ্ট করার সুযোগ দেয় না, বরং জীবনে ইতিবাচক শক্তি এবং সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করে বলেও মনে করা হয়।
কবে পিঠোরী অমাবস্যা ২০২৫?
পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথি ২২ আগস্ট ২০২৫, শুক্রবার পালিত হবে। এই তিথি ২২ আগস্ট সকাল ১১:৫৫ মিনিটে শুরু হবে এবং ২৩ আগস্ট সকাল ১১:৩৫ মিনিটে শেষ হবে। উদয়া তিথি অনুসারে, এই বছর ব্রত ২২ আগস্ট রাখা হবে।
পিতৃ দোষ থেকে মুক্তির উপায়
- শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করুন: সকালে স্নানের পর তিল, ফুল ও জল অর্পণ করুন। বিশ্বাস করা হয় যে তর্পণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষরা তৃপ্ত হয়ে আশীর্বাদ দেন।
- পবিত্র নদীতে স্নান: গঙ্গা, যমুনা বা কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করা শুভ। যদি সম্ভব না হয় তবে গঙ্গাজল মিশিয়ে বাড়িতে স্নান করুন।
- পিপল গাছের পূজা: পিপল গাছে জল ঢেলে প্রদীপ জ্বালান, এতে পিতৃ দোষ শান্ত হয়।
- অসহায়দের অন্নদান: দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের অন্নদান করলে পিতৃপুরুষরা সন্তুষ্ট হন এবং দোষ দূর হয়।
- দান করুন: তিল, অন্ন, বস্ত্র এবং দক্ষিণা দান করলে জীবনের বাধা কমে যায় এবং পরিবারে সুখ-শান্তি আসে।
পিঠোরী অমাবস্যার ধর্মীয় তাৎপর্য
পিঠোরী অমাবস্যাকে মাতৃ অমাবস্যাও বলা হয়। এই দিনে সন্তানবতী মহিলারা দেবী দুর্গার পূজা করে তাদের সন্তানদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে যে এই দিনে শ্রাদ্ধ ও দান করলে পিতৃপুরুষরা প্রসন্ন হয়ে পরিবারের উপর সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই তিথি কেবল পিতৃপুরুষদের তৃপ্তির জন্যই নয়, পাপ থেকে মুক্তি এবং জীবনে আসা বাধা দূর করার জন্যও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।