কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রা করছেন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল ভোট চুরি এবং ভোটার তালিকায় গরমিলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। এই যাত্রায় তেজस्वी যাদব এবং বাম দলগুলির নেতারাও অংশ নিয়েছেন, যা রাজ্যের ২৫টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
বিহার: কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহারে ভোট চুরি এবং ভোটার তালিকা গরমিলের বিরুদ্ধে শনিবার ভোটার অধিকার যাত্রা শুরু করেছেন। এই যাত্রাটি সাসারাম থেকে শুরু হয়েছে এবং এটি ১৬ দিন ধরে চলবে, যেখানে রাজ্যের ২৫টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাত্রার দ্বিতীয় দিনে রাহুল গান্ধী ঔরঙ্গাবাদ থেকে গয়াতে পৌঁছন, যেখানে তাঁর সঙ্গে তেজस्वी যাদব এবং বাম দলগুলির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার লিস্টে কারচুপির অভিযোগ করেছেন।
দ্বিতীয় দিনের যাত্রা: ঔরঙ্গাবাদ থেকে গয়া পর্যন্ত
রাহুল গান্ধীর যাত্রার আজ দ্বিতীয় দিন ছিল। সকাল আটটায় যাত্রাটি দেও রোড থেকে শুরু হয়। যাত্রার কনভয় আম্বা-কুতুম্বা, তেলহারা, পাতালগঙ্গা এবং পুরনো থানা মোড় হয়ে দেও সূর্য মন্দিরে পৌঁছয়। সকাল ৯:৩০টায় রাহুল গান্ধী দেও সূর্য মন্দিরে পুজো দেন।
এর পরে যাত্রাটিকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্রাম দেওয়া হয় এবং বিকেল ৪টায় এটি পুনরায় শুরু করা হয়। এই সময় যাত্রাটি গুরুরু, বাগডিহা মোড়, আহিয়াপুর রোড, দাউদনগর-গয়া রোড, পঞ্চানপুর এবং কেওলি হয়ে দিল্লি ওভারব্রিজ দিয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬:৩০টায় রাহুল গান্ধী একটি জনসভায় ভাষণ দেন, যেখানে প্রচুর সংখ্যক লোক জড়ো হয়েছিল। এর পর রাত ৭:৩০টায় যাত্রাটি খলিশ পার্ক, গয়াতে পৌঁছয়।
রাহুল গান্ধীর বার্তা: ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’
রাহুল গান্ধী এই যাত্রা ঘোষণার সময় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ লিখেছেন:
‘১৬ দিন, ২০টিরও বেশি জেলা এবং ১,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব। আমরা জনগণের মধ্যে ভোটার অধিকার যাত্রা নিয়ে আসছি। এটি শুধু একটি যাত্রা নয়, বরং সবচেয়ে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার—এক ব্যক্তি, এক ভোটের সুরক্ষার লড়াই।’
তিনি বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের উপর সরাসরি আক্রমণ করেন। রাহুল বলেন যে, দেশজুড়ে ভোটার তালিকা কারচুপি করা হচ্ছে এবং বিহার এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তাঁর অভিযোগ, মহারাষ্ট্রে হঠাৎ করে এক কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন, যা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
১৬ দিনে ২৫টি জেলার যাত্রা
এই যাত্রাটি মোট ১৬ দিন ধরে চলবে এবং রাজ্যের প্রায় ২৫টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। কর্মসূচি অনুসারে, ১৯শে আগস্ট যাত্রাটি গয়া থেকে নওয়াদা এবং বরবিঘা পৌঁছবে। ২০শে আগস্ট যাত্রাটিকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, যেখানে ২১শে আগস্ট এটি শেখপুরা এবং জামুই হয়ে মুঙ্গের যাবে।
২২শে আগস্ট যাত্রাটি মুঙ্গের থেকে ভাগলপুর, ২৩শে আগস্ট ভাগলপুর থেকে পূর্ণিয়া এবং ২৪শে আগস্ট পূর্ণিয়া থেকে আরারিয়ার দিকে অগ্রসর হবে। ২৬শে আগস্ট এটি সুপौल, মধুবনী এবং দরভাঙ্গা, ২৭শে আগস্ট দরভাঙ্গা থেকে সীতামঢ়ী, এবং ২৮শে আগস্ট সীতামঢ়ী থেকে মোতিহারি ও পশ্চিম চম্পারণে পৌঁছবে।
এর পর ২৯শে আগস্ট এই যাত্রাটি বেতিয়া থেকে সিওয়ান, ৩০শে আগস্ট ছাপরা এবং ভোজপুর হয়ে এগিয়ে যাবে। সবশেষে ১লা সেপ্টেম্বর পাটনায় একটি বিশাল জনসভার মাধ্যমে এর সমাপ্তি হবে।
লালু যাদব ও তেজস্বীর সমর্থন
এই যাত্রাটি ১৭ই আগস্ট সাসারাম থেকে শুরু হয়েছিল। সেই দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন। লালু বলেন যে, গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য বিরোধী দলগুলির এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরজেডি নেতা তেজस्वी যাদব ক্রমাগত রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যাত্রায় উপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন যে, বিহারের জনগণ এখন পরিবর্তন চায় এবং এই যাত্রা সেই পরিবর্তনের শুরু। বামপন্থী দলের নেতারাও এই যাত্রাকে গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই বলে অভিহিত করেছেন।
নির্বাচনের আগে সরকারের বড় চাল
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাহুল গান্ধীর এই যাত্রা কেবল বিহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি জাতীয় স্তরে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা যে কংগ্রেস এবং মহাজোট ভোটার অধিকারের বিষয়টিকে নির্বাচনী বিতর্কের কেন্দ্রে আনতে চায়।
বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই যাত্রার উপর কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে মনে করা হচ্ছে যে যাত্রা যত এগোবে, রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ ততই বাড়বে। বিহারের জনগণের জন্য এই যাত্রা আসন্ন নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক আলোচনা তৈরি করার চেষ্টা।