'রামায়ণ'-এর অনেক শিল্পীই এখন আর নেই, তাঁদের মধ্যে দারা সিং, মুকেশ রাওয়াল, ললিতা পাওয়ার, বিজয় অরোরা, জয়শ্রী গাডকর, মূলরাজ রজদা এবং নলীন দাভে-র মতো নামগুলি উল্লেখযোগ্য।
রামায়ণ: রামানন্দ সাগরের ঐতিহাসিক টিভি সিরিজ 'রামায়ণ' ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৮৭ সালে সম্প্রচারিত এই শো সেই সময়ে প্রতিটি বাড়িতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। শো-এর জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে, মানুষজন তাদের সমস্ত কাজ ফেলে 'রামায়ণ' দেখতে বসত। এতে অভিনয় করা শিল্পীরা ঘরে ঘরে ভগবানের আসনে স্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই পৌরাণিক সিরিয়ালের অনেক তারকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এদের মধ্যে কারও মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল, আবার কারও মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং রহস্যজনক পরিস্থিতিতে হয়েছিল।
শ্যাম সুন্দর কালানি: দুটি চরিত্র, একজন শক্তিশালী শিল্পী এবং একটি চমকপ্রদ বিদায়
শ্যাম সুন্দর কালানি রামায়ণে বালী এবং সুগ্রীব—উভয় শক্তিশালী বানর ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর শক্তিশালী শরীর, গম্ভীর কণ্ঠস্বর এবং শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি এই পৌরাণিক চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। তাঁকে দেখে দর্শকদের মনে হতো যেন তাঁরা সত্যিই বানর রাজাদের দেখছেন। কিন্তু এই শক্তিশালী শিল্পী ২৯শে মার্চ ২০২০-এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর মৃত্যুর খবর ১০ দিন পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। যখন রামের চরিত্রে অভিনয় করা অরুণ গোভিল সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানান, তখনই মানুষজন এই দুঃখজনক খবরটি জানতে পারে। শ্যাম সুন্দর কালানির মৃত্যুর পরিস্থিতি ছিল রহস্যজনক। তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বেশি তথ্য সামনে আসেনি, যা ভক্তদের মধ্যে জল্পনা বাড়িয়ে তোলে।
পেশায় কুস্তিগীর শ্যাম সুন্দর কালানি 'রামায়ণ' ছাড়াও কিছু ছবিতেও কাজ করেছেন। তিনি অমিতাভ বচ্চন এবং বিনোদ খান্নার মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। কিন্তু রামায়ণে তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলিই তাঁকে অমর করে রেখেছে।
উর্মিলা ভাট: যাঁর জীবনের গল্পের চেয়েও দুঃখজনক ছিল তাঁর পরিণতি
রামায়ণে মা সীতার মা মহারানী সুনয়নার চরিত্রে অভিনয় করা উর্মিলা ভাট একজন অভিজ্ঞ এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি অনেক হিন্দি সিনেমা এবং টিভি শো-তে কাজ করেছেন এবং তাঁর অভিনয় দিয়ে দর্শকদের প্রভাবিত করেছেন। কিন্তু তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
২২শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে যখন উর্মিলা ভাট তাঁর বাড়িতে একা ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, তাও আবার অত্যন্ত নৃশংসভাবে। প্রথমে তাঁকে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় এবং পরে তাঁর গলা কেটে দেওয়া হয়। পরের দিন যখন তাঁর জামাতা বিক্রম পারেখ তাঁর সাথে দেখা করতে যান, তখন তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখেন।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকেই নয়, সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। পুলিশ তদন্তে জানা যায় যে এটি কোনো সাধারণ ডাকাতি ছিল না, বরং পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটানো হত্যা ছিল। কিন্তু আজও তাঁর হত্যার সাথে জড়িত অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে।
এই শিল্পীদেরও মৃত্যু হয়েছে
রামায়ণে অভিনয় করা আরও অনেক শিল্পী এখন আর এই পৃথিবীতে নেই। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
- দারা সিং (হনুমান): যাঁর গণনা ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেতাদের মধ্যে করা হয়।
- মুকেশ রাওয়াল (বিভীষণ): যিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।
- ললিতা পাওয়ার (মন্থরা): যিনি বার্ধক্যে মারা যান।
- বিজয় অরোরা (ইন্দ্রজিৎ): যাঁর রোগ ভোগের কারণে মৃত্যু হয়।
- জয়শ্রী গাডকর (কৌশল্যা): মারাঠি এবং হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত অভিনেত্রী।
- মূলরাজ রজদা (জনক): যাঁর অভিনয়-এর ঐতিহ্য আজও জীবিত।
রামায়ণের প্রতিটি চরিত্র ভারতীয় দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এই শিল্পীরা শুধু অভিনয় করেননি, বরং বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু পর্দায় দেব-দেবীর ভূমিকা পালন করা এই শিল্পীরা বাস্তব জীবনে অনেক সময় একাকীত্ব, অসুস্থতা বা নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন।