উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরে প্রায় ২০ বছর পর ওয়ার্লিতে মারাঠি বিজয় র্যালিতে একই মঞ্চে এলেন। মারাঠি ভাষা ও আত্মমর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই র্যালিতে সুপ্রিয়া সুলেও অংশ নিয়েছিলেন।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতি: মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় দেখা গেল। প্রায় দুই দশক পর ঠাকরে পরিবারের দুই প্রধান মুখ – উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে – প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে একসঙ্গে দেখা দিলেন। এই উপলক্ষ্য ছিল 'মারাঠি বিজয় র্যালি', যা মারাঠি ভাষা ও আত্মমর্যাদার সমর্থনে মুম্বাইয়ের ওয়ার্লিতে অবস্থিত NSCI ডোম-এ আয়োজিত হয়েছিল।
দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক ঐক্যের ঝলক
এই দৃশ্যটি কেবল একটি র্যালি ছিল না, বরং মারাঠি ঐক্যের প্রতীক ছিল। উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে, যারা বহু বছর ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক পথে হেঁটেছেন, আজ একই মঞ্চে দেখা দিলেন। এই র্যালিতে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP)-র নেত্রী সুপ্রিয়া সুলেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মঞ্চে আসার আগে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
বাল ঠাকরের স্মৃতিস্থলে শ্রদ্ধার্ঘ্য
র্যালি শুরুর আগে দুই নেতা শিবাজি পার্কে অবস্থিত তাঁদের পিতা এবং শিবসেনা-র প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের স্মৃতিস্থলে যান এবং শ্রদ্ধা জানান। এই দৃশ্যটি একইসঙ্গে আবেগপূর্ণ এবং রাজনৈতিক ইঙ্গিতে ভরপুর ছিল। এই সাক্ষাৎ কেবল মঞ্চের উপস্থিতি ছিল না, বরং মারাঠি আত্মমর্যাদার লড়াইয়ে একটি সম্মিলিত সংকল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
শিবসেনা ও এমএনএস-এর মধ্যে কি নতুন সমীকরণ?
রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (MNS) এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (UBT) বহু বছর ধরে আলাদা পথে চলছে। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত ত্রিভাষা ফর্মুলার বিরুদ্ধে দুই নেতাই একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই সম্মিলিত প্রতিবাদের ফলস্বরূপ রাজ্য সরকারকে নীতিটি স্থগিত রাখতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে, একই মঞ্চে আসা নিছক প্রতীকী নয়, বরং কৌশলগত বলেও মনে করা হচ্ছে।
র্যালিতে মারাঠি আত্মমর্যাদার শক্তি
এই র্যালিটিকে "মারাঠি ঐক্যের জয়" হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। র্যালিতে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী এবং সাধারণ মারাঠি জনতা বিপুল সংখ্যায় যোগ দিয়েছিলেন। NSCI ডোম-এ প্রায় ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ মানুষের বসার ব্যবস্থা ছিল। বাইরের রাস্তায়ও LED স্ক্রিন লাগানো হয়েছিল, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারেন।
নেতাদের ভাষণে উদ্দীপনা
শিবসেনা (UBT)-র সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, এটি আমাদের জন্য উৎসবের মতো দিন। দুই নেতা, যারা বহু বছর আগে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন, আজ একটি উদ্দেশ্যে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য এই ঐক্য খুবই জরুরি।
এমএনএস নেতা প্রকাশ মহাজন বলেন, এই মঞ্চ মারাঠি সমাজের ঐক্য ও সম্মানের প্রতীক হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে মারাঠি পরিচয় নতুন দিশা পাবে এবং এই ঐক্যের প্রভাব আগামী নির্বাচনেও দেখা যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঐক্যকে আসন্ন BMC নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত করে দেখছেন। বিজেপি সাংসদ নারায়ণ রানে এবং শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী)-র রামদাস কদম এই ঐক্যকে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের কিছু নেতার অনুপস্থিতিও আলোচনার বিষয় ছিল। শরদ পাওয়ার এবং কংগ্রেস নেতা হর্ষবর্ধন সাপকালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তবে তাঁরা র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন না।