কেন্দ্রীয় সরকার বস্ত্রশিল্পকে স্বস্তি দিয়ে কাঁচা তুলোর আমদানির উপর ১১% সীমা শুল্ক এবং এআইডিসি সম্পূর্ণরূপে মকুব করে দিয়েছে। এই ছাড় ১৯ অগাস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই পদক্ষেপের ফলে মূল্যবৃদ্ধির চাপ এবং আমেরিকান ট্যারিফের মতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে টেক্সটাইল শিল্প সাময়িক স্বস্তি পাবে।
নয়া দিল্লি: বস্ত্রশিল্পের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে কেন্দ্র সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার ১৯ অগাস্ট ২০২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কাঁচা তুলোর আমদানির উপর ধার্য ১১% সীমা শুল্ক এবং কৃষি পরিকাঠামো এবং উন্নয়ন সেস (এআইডিসি) প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ বস্ত্রশিল্পকে চড়া দাম, বিদেশি চাহিদার পতন এবং আমেরিকান ট্যারিফের মধ্যে স্বস্তি দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, এই অস্থায়ী ছাড় জনস্বার্থে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে মূল্যবৃদ্ধির চাপে থাকা টেক্সটাইল কোম্পানিগুলি বড় রকমের স্বস্তি পাবে।
টেক্সটাইল কোম্পানিগুলির জন্য স্বস্তির পদক্ষেপ
এতদিন পর্যন্ত ভারতে কাঁচা তুলোর আমদানির উপর ১১ শতাংশ সীমা শুল্ক আদায় করা হতো। কিন্তু সরকার ৪২ দিনের জন্য এর উপর সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেছে। বস্ত্রশিল্প দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে এই ছাড়ের দাবি করছিল। শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য ছিল, তুলোর ক্রমাগত বাড়তে থাকা দাম এবং আমদানির উপর উঁচু শুল্ক তাদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ঘরোয়া স্তরে তৈরি কাপড়ের দামও প্রভাবিত হচ্ছিল।
বাড়তে থাকা মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত
কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করেছে যে শিল্পের বাধ্যবাধকতা দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির চাপে রয়েছে। কাঁচা তুলোর উপর শুল্ক সরানো হলে তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে। সরকারের বিশ্বাস, এই পদক্ষেপের ফলে বস্ত্রশিল্প বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবে।
কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন
ভারতের বস্ত্রশিল্প দেশের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান প্রদানকারী ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন। এমতাবস্থায়, তুলোর উপর থেকে আমদানি শুল্ক সরানো হলে কোম্পানিগুলির বোঝা কমবে এবং এর সরাসরি প্রভাব কর্মসংস্থানের উপরও পড়বে। যে ইউনিটগুলির উপর খরচের চাপ বাড়ছিল, সেখানে এখন কিছুটা স্বস্তি অনুভূত হবে।
আমেরিকান ট্যারিফ এবং বিদেশি বাজারের চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি আমেরিকা ভারতীয় বস্ত্রের উপর ভারী ট্যারিফ চাপিয়েছে। এতে রপ্তানিকারকদের সমস্যা আরও বেড়েছে। আগে থেকেই বিদেশি চাহিদা কম ছিল এবং এখন অতিরিক্ত ট্যারিফ ভারতীয় কোম্পানিগুলির প্রতিযোগিতার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। এমন সময় সরকার কর্তৃক তুলো আমদানির উপর দেওয়া ছাড় শিল্পের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। যদিও এই ছাড় অস্থায়ী এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের পর পুনরায় পুরনো নিয়ম কার্যকর হয়ে যাবে।
বস্ত্র শিল্পের পুরনো দাবি
শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি অনেক দিন ধরেই সরকারের কাছে নিজেদের দাবি পেশ করছিল। তাদের বক্তব্য ছিল যে তুলোর উঁচু দাম তাদের মুনাফা কমিয়ে দিয়েছে। আমদানির উপর ধার্য শুল্কের কারণে তাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এর ফলে ঘরোয়া বাজারে তৈরি কাপড়ও দামি হচ্ছিল এবং বিদেশি বাজারেও তাদের প্রভাব দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল।
দামি তুলো নিয়ে সমস্যায় কোম্পানিগুলি
গত কয়েক মাস ধরে কাঁচা তুলোর দাম ক্রমাগত বাড়ছিল। যে কোম্পানিগুলির কাছে আগে থেকে স্টক ছিল না, তারা বেশি দামে তুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছিল। এতে উৎপাদনের খরচ বেড়ে গিয়েছিল। এটাই কারণ যে ছোট এবং মাঝারি স্তরের টেক্সটাইল ইউনিটগুলির উপর সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো।
অস্থায়ী ছাড় থেকে মিলবে ভারসাম্য
এই ছাড় যদিও মাত্র ৪২ দিনের জন্য, তবুও এর থেকে শিল্প কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিশ্চিতভাবে স্বস্তি পাবে। কোম্পানিগুলির উৎপাদন পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং অর্ডার পূরণ করতে সুবিধা হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই পদক্ষেপের ফলে বাজারে কাপড়ের দামের উপরও প্রভাব পড়বে এবং গ্রাহকরাও কিছুটা স্বস্তি অনুভব করতে পারবেন।