বিহার রাজনীতিতে RJD-এর 'দ্বৈত চাল': করিশ্মা রায়কে টিকিট দিয়ে তেজস্বীর বড় বার্তা

বিহার রাজনীতিতে RJD-এর 'দ্বৈত চাল': করিশ্মা রায়কে টিকিট দিয়ে তেজস্বীর বড় বার্তা

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত তেজ প্রতাপ যাদবের সমর্থনে থাকা লালু পরিবার এখন তাদের নির্বাচনী কৌশলে বড় পরিবর্তন এনেছে।

পাটনা: বিহারের পরসা বিধানসভা আসনে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) ড. করিশ্মা রায়কে প্রার্থী করে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে। করিশ্মা রায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দারোগা রায়ের নাতনি এবং পেশায় একজন ডেন্টিস্ট। তেজস্বী যাদবের এই কৌশলকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ‘দ্বৈত চাল’ বলছেন, কারণ এর মাধ্যমে দলটি কেবল পরসা আসনে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেনি, বরং প্রাক্তন বিধায়ক তেজ প্রতাপ যাদব এবং তাঁর পরিবারের সাথে জড়িত রাজনীতিতেও নতুন মোড় এনেছে।

তেজস্বীর বড় রাজনৈতিক চাল

২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে RJD-এর অভ্যন্তরে সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত তেজ প্রতাপ যাদবের সমর্থনে থাকা লালু পরিবার এখন নতুন রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তেজস্বী যাদব তেজ প্রতাপের তুতো শালী ড. করিশ্মা রায়কে টিকিট দিয়ে পুরনো বিতর্ক পিছনে ফেলে আসার বার্তা দিয়েছেন।

২০২০ সালে তেজ প্রতাপ এবং তাঁর স্ত্রী ঐশ্বর্যা রায়ের মধ্যে বিবাদের কারণে পরিবার তেজ প্রতাপের পক্ষ নিয়েছিল। সেই সময় ঐশ্বর্যার বাবা চন্দ্রিকা রায় RJD ছেড়েছিলেন। এখন পাঁচ বছর পর, তেজস্বী করিশ্মাকে পরসা আসন থেকে প্রার্থী করে সমীকরণ সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন।

পরসা আসন এবং JDU-এর প্রতিক্রিয়া

পরসা আসনে JDU ঐশ্বর্যা রায়ের বাবা চন্দ্রিকা রায়ের টিকিট কেটে দিয়েছে। JDU সম্প্রতি RJD থেকে যোগ দেওয়া ছোটেলাল রায়কে প্রার্থী করেছে। উল্লেখ্য, ছোটেলাল রায় পরসার RJD-এর বর্তমান বিধায়ক ছিলেন এবং তিনি গত নির্বাচনে চন্দ্রিকা রায়কে ১৭,০০০ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। তেজস্বী করিশ্মাকে টিকিট দিয়ে চন্দ্রিকা রায়ের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন। টিকিট হারানোর পর চন্দ্রিকা রায় অন্য দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বা মেয়েকে ভিকটিম দেখিয়ে সহানুভূতি ভোট পাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারতেন। কিন্তু করিশ্মা টিকিট পাওয়ায় তাঁর এই পরিকল্পনা প্রভাবিত হয়েছে।

তেজস্বী করিশ্মাকে প্রার্থী করে তেজ প্রতাপ যাদবকেও রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে RJD এখন সেই সব ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে না, যাদের থেকে ২০২০ সালে ব্যক্তিগত বিবাদের কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে যে, করিশ্মা রায় যখন ভাইঝি হিসাবে তাঁর কাকা চন্দ্রিকা রায়ের কাছে জয়ের আশীর্বাদ নিতে যাবেন, তখন তিনি পারিবারিক সমর্থনও পাবেন। এর ফলে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত হবে।

পরসা আসনের জাতিগত সমীকরণ

পরসা বিধানসভা ক্ষেত্রে জাতিগত সমীকরণ নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। এখানে যাদব, মুসলিম, কুশওয়াহা এবং দলিত ভোটারদের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ।

  • RJD-এর তার ঐতিহ্যবাহী যাদব এবং মুসলিম (M-Y) ভোটব্যাঙ্কের উপর শক্তিশালী দখল রয়েছে।
  • কুশওয়াহা এবং উচ্চবর্ণের উপর BJP এবং JDU-এর দখল রয়েছে।
  • হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ পরসা আসনে প্রায় ১০-১২ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যাও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • যাদব ভোটাররা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, এরপর কুশওয়াহা, দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি আসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে করিশ্মা রায়ের টিকিট পাওয়ায় RJD তার M-Y ভোটব্যাঙ্ককে সক্রিয় করতে পারে, অন্যদিকে JDU এবং BJP-কে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হতে পারে।

Leave a comment