দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক দাবি
দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাশিয়ার ডেপুটি চিফ অফ মিশন রোমান বাবুশকিন সরাসরি জানালেন, আমেরিকার আরোপিত ট্যারিফের বিকল্প হিসেবে ভারত চাইলে রাশিয়ার বাজারকে বেছে নিতে পারে। তাঁর কথায়, যদি আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য ঢুকতে সমস্যায় পড়ে, তাহলে আমাদের বাজার তাদের জন্য সব সময় খোলা রয়েছে। এই বার্তা স্পষ্টতই মার্কিন ট্যারিফ নীতির বিরুদ্ধে রাশিয়ার এক পাল্টা রাজনৈতিক ইঙ্গিত।
ট্যারিফের বোঝায় চাপা ভারতীয় রপ্তানি
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছে। বিশেষ করে তেল বাণিজ্যে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতার কারণেই এই চাপ তৈরি হয়েছে বলে ওয়াশিংটনের তরফে জানানো হয়। এর ফলে ভারতের পণ্য আমেরিকায় রপ্তানির খরচ বেড়ে গিয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাজারে প্রবেশ কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
রাশিয়ার আশ্বাস: এনার্জি কো-অপারেশন চলবেই
রোমান বাবুশকিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাইরের চাপ বা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত-রাশিয়া এনার্জি কো-অপারেশন থামবে না। তাঁর কথায়, “আমরা ভারত-রাশিয়ার সম্পর্কের উপর বিশ্বাস রাখি। আন্তর্জাতিক চাপ বা ট্যারিফে সেই বন্ধন ভাঙবে না।” এনার্জি সেক্টর ঘিরে এই আশ্বাস ভারতীয় সরকারের কাছে কূটনৈতিকভাবে বড় প্রাপ্তি।
পশ্চিমকে ‘নব্য উপনিবেশবাদ’-এর অভিযোগ
আমেরিকার ট্যারিফকে শুধু অর্থনৈতিক চাপ নয়, রাজনৈতিক চাল হিসেবেও দেখছে রাশিয়া। বাবুশকিন সরাসরি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলি নতুন ধরনের নব্য-উপনিবেশবাদ চালু করেছে। তাঁর মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে চাপ দিয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছে আমেরিকা এবং তার মিত্ররা। ভারত এই পরিস্থিতিতে যে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াতে পারে, তা-ও তিনি ইঙ্গিত দেন।
হোয়াইট হাউসের সাফ বার্তা
এর আগেই হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করতেই ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক চাপানো হয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের সঙ্গে সরাসরি লড়াই নয়, বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করাই ছিল ওয়াশিংটনের মূল উদ্দেশ্য। তবে এই কূটনৈতিক খেলায় ভারত কার্যত দুই শক্তির মধ্যে চাপে পড়েছে।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর কূটনৈতিক সিগন্যাল
সম্প্রতি আলাস্কায় মুখোমুখি বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনও সিদ্ধান্ত সেই বৈঠকে হয়নি। তার পরেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। রাশিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, এই ফোনকলই প্রমাণ করে ভারতের প্রতি রাশিয়ার বিশেষ গুরুত্ব।
ভারতের কূটনৈতিক পরীক্ষা
আমেরিকা একদিকে ভারতের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে রাশিয়া তাদের আরও ঘনিষ্ঠ হতে আহ্বান জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে কঠিন কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত—কার দিকে ঝুঁকবে দিল্লি? একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি আমেরিকা, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে এখন ব্যালান্সিং পলিসি নিয়ে চলতে হবে।
বাজারের সুযোগ বনাম রাজনৈতিক ঝুঁকি
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে রাশিয়ার বাজার নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলতে পারে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মা, চা, মশলা, আইটি পণ্য রপ্তানিতে সুযোগ রয়েছে। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি। ইউরোপ বা আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে রাশিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
রাশিয়ার বক্তব্যে ভারতের তাৎপর্য বৃদ্ধি
বাবুশকিনের মন্তব্যে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত এখন আর শুধু একজন দর্শক নয়, বরং শক্তিশালী খেলোয়াড়। রাশিয়া ভারতের বাজার সম্ভাবনা এবং কূটনৈতিক গুরুত্বকে কাজে লাগাতে চাইছে। পশ্চিমা চাপে দাঁড়িয়ে ভারত যদি রাশিয়ার পাশে থাকে, তবে তা ভূরাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে।
দিল্লির কঠিন অঙ্ক
রাশিয়ার উষ্ণ বার্তা ভারতের জন্য যেমন কূটনৈতিক আশ্বাস, তেমনি এক নতুন চ্যালেঞ্জও। আমেরিকা-রাশিয়া দ্বন্দ্বের মাঝে ভারতকে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করেই এগোতে হবে। আগামী দিনে দিল্লি কোন কূটনৈতিক পথ বেছে নেয়, তার উপরই নির্ভর করছে ভারতীয় রপ্তানি বাজারের ভবিষ্যৎ।রাশিয়ার কূটনৈতিক বার্তা দিল্লি থেকে সরাসরি।আমেরিকার ট্যারিফে ভারতীয় রপ্তানি চাপে।রাশিয়ার এনার্জি সহযোগিতার আশ্বাস।পশ্চিমকে নব্য-উপনিবেশবাদে অভিযুক্ত করল রাশিয়া।হোয়াইট হাউস জানাল ট্যারিফ রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ তৈরির কৌশল।ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর পুতিনের মোদীকে ফোন।ভারতের কূটনৈতিক পরীক্ষার সূচনা।রাশিয়ার বাজার ভারতের জন্য সম্ভাবনা ও ঝুঁকি দুটোই।আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব বাড়ছে।দিল্লির সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত—কোন পথ বেছে নেবে ভারত?