২৭ বছরে বিয়ে মাত্র ২৪ মাসেই ভাঙন আজ কেমন আছেন অভিনেত্রী সাই তামহঙ্কর?

২৭ বছরে বিয়ে মাত্র ২৪ মাসেই ভাঙন আজ কেমন আছেন অভিনেত্রী সাই তামহঙ্কর?

আলো-আঁধারির পথে প্রতিভাবান অভিনেত্রী

বলিউড ও আঞ্চলিক চলচ্চিত্রের পর্দায় এক সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বারবার জনসাধারণের আলোচনার আড়ালে পড়েছিলেন। তবে OTT প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব তাঁর জীবনে এক নতুন মোড় এনে দেয়। সেখানে তিনি কেবল ভিন্ন পরিচয়ই পাননি, বরং বড় বড় চলচ্চিত্রের প্রস্তাবও আসতে শুরু করে। উল্লেখযোগ্য বিষয়, ২০০৮ সালে অনিল কাপুরের বিপরীতে তিনি অভিনয় করেন নিজের প্রথম ছবিতে। সেখান থেকেই যাত্রার শুরু, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন যেন সবসময়ই তাঁর সঙ্গে থেকেছে।

গজিনির পর চমকপ্রদ কেরিয়ার

অভিনেত্রীর দ্বিতীয় হিন্দি সিনেমা ছিল সুপারহিট ছবি গজিনি, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন আমির খান। এই ছবির সাফল্যের পর তাঁর কেরিয়ারের দরজা খুলে যায় অনেকদূর পর্যন্ত। তবু, জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাঁর নাম সবসময় লাইমলাইটে আসেনি। আজ এই অভিনেত্রীর বয়স ৩৯ বছর। দর্শকরা জানেন তাঁকে শক্তিশালী চরিত্রে, নিপুণ অভিনয়ের জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ভিন্নরকম লড়াইয়ের সাক্ষী।

প্রেম থেকে বিয়ের যাত্রাপথ

তরুণী বয়সে ভিজ্যুয়াল এফেক্ট শিল্পী আমেয়া গোসাভির প্রেমে পড়েন সাই। তিন বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক কাটিয়ে অবশেষে ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল তাঁদের বাগদান সম্পন্ন হয়। বিয়ের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হয়েছিল। তবে কাজের চাপ ও ব্যস্ততার কারণে দু’জনের বিয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রীয় রীতি মেনে জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাইয়ের বয়স তখন মাত্র ২৭। চারপাশে আলো, আনন্দ, শুভেচ্ছা—সবকিছুই এক নিখুঁত শুরু বলে মনে হচ্ছিল।

একই পেশা, তবু আলাদা দুনিয়া

বিয়ের পরেই বোঝা যায়, একই পেশার মানুষ হলেও তাঁদের কাজের ক্ষেত্র আলাদা। আমেয়া গোসাভি ভিজ্যুয়াল এফেক্টস আর প্রোডাকশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর নিজের প্রোডাকশন হাউসও ছিল, নাম Loading Pictures। অন্যদিকে সাই তামহঙ্কর অভিনয়ের জগতে ব্যস্ত ছিলেন একের পর এক ছবিতে। যদিও দুজনেই একই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা কোনওদিন একসঙ্গে কাজ করেননি। এই দূরত্বই ধীরে ধীরে তৈরি করতে থাকে অচেনা ফাঁক।

মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ভাঙন

যে বিয়ে নিয়ে শুরুতে এত উচ্ছ্বাস ছিল, সেটি টিকল মাত্র দুই বছর। ২০১৫ সালের মধ্যে তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবশেষে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন দুজনেই। সাই তখন তাঁর অভিনয় জীবনে ব্যস্ত, আর আমেয়াও তাঁর প্রোডাকশন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত চাপ একসঙ্গে সামলাতে না পেরে শেষমেশ আলাদা হওয়ার পথ বেছে নেন তাঁরা।

ব্যক্তিগত ঝড় পেরিয়ে নতুন উড়ান

বিবাহবিচ্ছেদের পর জীবনে ভীষণ কঠিন সময় কাটিয়েছেন সাই। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং অভিনয়কেই অস্ত্র করে এগিয়ে চলেছেন। OTT প্ল্যাটফর্মে কাজ করে তিনি নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্মেই তাঁর আসল প্রতিভা সামনে এসেছে। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এখন ওয়েব সিরিজেও তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করছে।

আজকের সাই তামহঙ্কর—লড়াকু ও স্বাধীন

আজ ৩৯ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে সাই তামহঙ্করকে অনেকেই চেনেন একজন লড়াকু শিল্পী হিসেবে। ব্যর্থ বিবাহিত জীবন তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। বরং নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। ক্যামেরার সামনে তিনি যেমন ঝলমলে, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও শক্তপোক্ত মানসিকতায় বেঁচে আছেন। বলিউড থেকে আঞ্চলিক সিনেমা—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন।

সম্পর্কের ভাঙন, জীবনের নয়

বিয়ে ভাঙলেও জীবনের পথ থেমে যায়নি সাই তামহঙ্করের জন্য। মাত্র ২৪ মাসের বিবাহিত জীবন তাঁকে নতুন এক শিক্ষা দিয়েছে—কোনও সম্পর্ক ভাঙলেও নিজের কেরিয়ার ও আত্মবিশ্বাস যেন অটুট থাকে। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম জড়াচ্ছে একের পর এক সফল প্রজেক্টের সঙ্গে। ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি ভুলে তিনি নতুন করে লড়াই শুরু করেছেন। সত্যিই, সাইয়ের গল্প অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

Leave a comment