মহালয়া ২০২৫ দুর্গাপুজোর সূচনা দিনক্ষণ ও ইতিহাস

মহালয়া ২০২৫ দুর্গাপুজোর সূচনা দিনক্ষণ ও ইতিহাস

দুর্গাপুজোর আগে মহালয়ার গুরুত্ব

দুর্গাপুজোর ব্যস্ততা শুরু হয় মহালয়া দিয়ে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে আলোকবেণুর বাজনা ও দুর্গার আগমনের প্রস্তুতি মহাসমারোহে শুরু হয়। মহালয়া হিন্দু ধর্মে শুধু একটি দিন নয়, এটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং মাতৃপক্ষের সূচনা। পুরাণে উল্লেখ আছে, মহালয়ার দিন দেবতা ও অসুরদের মধ্যে মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যা দেবী দুর্গার বিজয়ের মাধ্যমে শুভশক্তির প্রতিষ্ঠা ঘটায়।

মহালয়ার অর্থ ও পিতৃপক্ষের শেষ

'মহালয়া' শব্দের অর্থ মহান আশ্রম বা আলয়। এই দিনে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত। দেবীর চক্ষুদানও এদিনই হয়। পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং মাতৃপক্ষের সূচনা হওয়ায় মহালয়া দুর্গাপুজোর প্রকৃত সূচনার প্রতীক। বাঙালির সংস্কৃতিতে ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার রীতি যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে।

মহালয়ার পবিত্র ইতিহাস

পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর অমর হয়ে যাওয়ার কারণে দেবতারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। তখন ত্রিশক্তি—ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর—নারীশক্তি সৃষ্টি করেন, যিনি মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের প্রদত্ত অস্ত্র দ্বারা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। এই ঘটনায় বাঙালিরা বিশ্বাস করেন, মহালয়া খারাপ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির বিজয় সূচিত করে।

রাজবাড়ি থেকে আজকের শহুরে পুজো

আগেকালে রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হতো। রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হতো এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান হত। পরে মহালয়ার দিন থেকেই প্রতিমার চক্ষু আঁকার প্রথা চালু হয়। আজকের দিনে বারোয়ারি পুজো সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পীরা অনেক সময় মহালয়ার আগেও চক্ষু অঙ্কন সম্পন্ন করেন। তবে হিন্দু ধর্মে মহালয়ার চক্ষুদানের গুরুত্ব অপরিসীম।

মহালয়া ২০২৫: দিনক্ষণ ও নির্ঘণ্ট

এই বছর মহালয়া পড়েছে ২১ অক্টোবর (৪ আশ্বিন), রবিবার। মহালয়ার অমাবস্যা তিথি শুরু হয় ২০ অক্টোবর রাত ১১:৫৪ মিনিটে এবং শেষ হয় ২১ অক্টোবর রাত ১২:২৩:৪৬ মিনিটে। এদিনের ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার রীতি অনুসরণ করে বাঙালি পরিবারের সদস্যরা।

পিতৃপক্ষ ও তপস্যার শেষ

মহালয়ার আগে ১৫ দিন ধরে চলে পিতৃপক্ষ। এই সময়ে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ ও বিভিন্ন তপস্যার রীতি পালন করা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। মহালয়া কেটে গেলে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি প্রকৃত অর্থে শুরু হয়।

দুর্গার চক্ষুদান ও পূজার মাহাত্ম্য

মহালয়ার দিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান ঘটে। এই দিনে প্রতিমা স্থাপনের জন্য শেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। চারপাশে পুরদস্তুর শুরুর সঙ্গে দুর্গাপুজোর আনন্দও তীব্র হয়ে ওঠে। বাড়ি-বাড়ি, প্যান্ডেল ও শহরজুড়ে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

পুজোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

মহালয়া শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অঙ্গ। এই দিনে ভক্তরা পরিবার-পরিজনকে একত্রিত করে, শাস্ত্র অনুযায়ী পুজো করেন এবং দুর্গাপুজোর আনন্দময় প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। শহুরে এলাকায় শিল্পীরা, প্রতিমা নির্মাতা এবং ভক্তরা মিলে প্রস্তুতি শুরু করেন।

মহালয়া: শুভশক্তির আগমন

মহালয়ার দিন থেকে দুর্গাপুজোর সপ্তদশী পর্যন্ত শুভশক্তি প্রসারিত হয়। দেবী দুর্গার আগমন অর্থাৎ পুণ্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই সময়ে পূজা করলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে এবং সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়।

মহালয়া মানে দুর্গাপুজোর সূচনা

মহালয়া শুধুই একটি দিন নয়, এটি দুর্গাপুজোর আরম্ভিক সূচক। এদিন পিতৃপুরুষের তপস্যা সমাপ্তি, মাতৃপক্ষের সূচনা, দেবীর চক্ষুদান—সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর পবিত্রতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য মহালয়া মানে শুধুই উৎসব নয়, এটি বিশ্বাস, ভক্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয়।

Leave a comment