শুভমন গিল এজবাস্টন টেস্টে ২৬৯ রান করেন, তবে ফিল্ডিংয়ের সময় একটি দ্রুতগতির বল তার মাথায় লাগলে তিনি আঘাত পান। আঘাত সামান্য হওয়ায় তিনি দ্রুত আবার মাঠে ফিরে আসেন।
শুভমন গিল: ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বার্মিংহামের এজবাস্টন মাঠে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে শুভমন গিল একদিকে যেমন তাঁর কেরিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তেমনই ফিল্ডিংয়ের সময় এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যা কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদস্পন্দন যেন স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
গিল, যিনি ২৬৯ রানের একটি শক্তিশালী ইনিংস খেলে ভারতকে প্রথম ইনিংসে ৫৮৭ রানের বিশাল স্কোরে পৌঁছে দেন, ফিল্ডিং করার সময় একটি বিপজ্জনক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। একটি বল সরাসরি তাঁর কপালে লাগে, যার ফলে তিনি মাটিতে বসে পড়েন এবং যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন।
শুভমনের ইনিংস: অধিনায়কের কাঁধে ভরসার শক্তি
শুভমন গিলকে রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক করা হয়েছে। তরুণ অধিনায়ক এই দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে না দেখে একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলেন এবং তাঁর ব্যাট দিয়ে এর জবাব দেন দুর্দান্তভাবে।
গিল এজবাস্টনের কঠিন পিচে ৩৮৭ বল মোকাবেলা করে ২৬৯ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন। এই ইনিংসে তিনি ৩০টি চার এবং ৩টি ছক্কা হাঁকান। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৬৯.৫১, যা টেস্ট ক্রিকেটে একটি দীর্ঘ ইনিংসের জন্য অত্যন্ত প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথম টেস্টেও গিল ১৪৭ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। দুটি ম্যাচে তাঁর মোট রান এখন ৪০০-এর বেশি, যা প্রমাণ করে যে তিনি কেবল ভবিষ্যতের খেলোয়াড়ই নন, বর্তমানে টিম ইন্ডিয়ার মেরুদণ্ডও হয়ে উঠেছেন।
দুর্ঘটনা যা এড়ানো গেল: অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ক্যাপ্টেন গিল
ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর যখন ইংল্যান্ড ব্যাটিং করতে নামে, তখন শুভমন গিল প্রথম স্লিপে ফিল্ডিং করছিলেন। রবীন্দ্র জাদেজার একটি বলে, ইংলিশ ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুক একটি দ্রুত শট খেলেন, যা সরাসরি গিলের দিকে যায়।
বলটি এত দ্রুত আসছিল যে গিলের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় ছিল না এবং বলটি সরাসরি তাঁর মাথার উপরের অংশে আঘাত করে। আঘাতটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে গিল সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বসে পড়েন। মেডিকেল স্টাফ সঙ্গে সঙ্গে মাঠে এসে তাঁকে পরীক্ষা করেন।
উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থও সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে ছুটে যান এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ভিডিওতে দেখা যায়, পন্থ গিলের মাথায় হাত রেখে পরীক্ষা করেন এবং তাঁকে সান্ত্বনা দেন। সৌভাগ্যবশত, এই আঘাত গুরুতর ছিল না এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই গিল আবার ফিল্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও
এই পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই এর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভক্তরা গিলের সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং স্বস্তি প্রকাশ করেন যে তিনি গুরুতর আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞও গিলের সতর্কতা এবং মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন।
অধিনায়কত্বে আত্মবিশ্বাস ও পরিপক্কতার ছাপ
অধিনায়ক হওয়ার পর শুভমন গিলের ব্যাটিংয়ে এক ভিন্ন ধরনের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। তিনি এখন কেবল একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান নন, বরং দায়িত্ববান একজন নেতাও হয়ে উঠেছেন। মাঠে তাঁর নেতৃত্ব ছিল শান্ত এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দ্বারা পরিপূর্ণ। বোলিংয়ে পরিবর্তন আনা হোক বা ফিল্ড প্লেসমেন্ট, গিল প্রতিটি ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। আঘাত পাওয়ার পরেও পুনরায় মাঠে নামা তাঁর অধিনায়কত্বের দৃঢ়তাকেই প্রমাণ করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের শক্তিশালী সূচনা
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো সূচনা করেছে। স্টাম্পের সময় টিম ইন্ডিয়া ১ উইকেট হারিয়ে ৬৪ রান করে ফেলেছিল। গিলের চোট সত্ত্বেও, মাঠে তাঁর উপস্থিতি দলের মনোবলকে উন্নত করার কাজ করছে। যদি ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০০-এর বেশি রান করে, তবে ইংল্যান্ডের সামনে ৪০০-এর বেশি রানের লক্ষ্য হতে পারে, যা সিরাজ এবং আকাশ দীপের ফর্মের দিকে তাকালে খুবই কঠিন বলে মনে হবে।