২০২৬ অসম বিধানসভা নির্বাচন: বিজেপির রণনীতি চূড়ান্ত, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত

২০২৬ অসম বিধানসভা নির্বাচন: বিজেপির রণনীতি চূড়ান্ত, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত

২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি তাদের রণনীতি চূড়ান্ত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্ষমতা-বিরোধী হাওয়া এবং আঞ্চলিকতাবাদী শক্তির মধ্যে দলকে শক্তিশালী রাখতে প্রস্তুত।

Assam Assembly Election 2026: অসমের ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের রণনীতি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে দল তাদের রণনীতি প্রায় স্থির করে ফেলেছে, যদিও বর্তমান ক্ষমতা-বিরোধী হাওয়া এবং আঞ্চলিকতাবাদী শক্তির মধ্যে এই লড়াইটি চ্যালেঞ্জিং হবে। এই নির্বাচন শুধুমাত্র বিধানসভার আসনের লড়াই নয়, বরং এটিকে অসমের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং বিজেপির নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে এমন একটি গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০২১ সালের নির্বাচন এবং বর্তমান পরিস্থিতি

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেই সময় উত্তর-পূর্ব ভারতে গেরুয়া ঢেউ (BJP Wave) শক্তিশালী হয়েছিল এবং হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০২১ সালে নির্বাচিত বর্তমান বিধানসভা ২ মে, ২০২৬ তারিখে তার মেয়াদ পূর্ণ করবে। কিন্তু এখন পাঁচ বছর পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। রাজ্যের রাজনৈতিক স্পন্দন অসন্তোষ এবং ক্ষমতা-বিরোধী অনুভূতিতে স্পন্দিত হচ্ছে। আঞ্চলিকতাবাদী শক্তির পুনরুত্থান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।

ক্ষমতা-বিরোধী হাওয়া

বিজেপি এখনও অসমে একটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, তবে রাজ্যে অসন্তোষ এবং আঞ্চলিকতাবাদী অনুভূতির প্রভাব বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচন নির্ধারণ করবে যে অসমের জনগণ ধারাবাহিকতার পক্ষে নাকি কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে চায়। বিরোধী মুখ হিসেবে গৌরব গগৈ নিজেকে একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছেন।

রণনীতির মন্থন

বিজেপির অসম ইউনিট ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি চূড়ান্ত করার জন্য শুক্রবার আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে রাজ্য ইউনিটের প্রসারিত কার্যনির্বাহী কমিটি বৃহস্পতিবার ডিব্রুগড়ে একটি বৈঠক করেছিল। বৈঠকটিকে গঠনমূলক বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন নির্বাচনী বিষয় ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শর্মা বলেছেন, “আমরা আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। কোর কমিটি এবং পদাধিকারী উভয়েরই বৈঠক হয়েছে এবং শুক্রবার আলোচনা চলবে।” দলের রাজ্য ইউনিটের সভাপতি দিলীপ সইকিয়া আসন্ন বৈঠকে গণমাধ্যমকে দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করবেন।

বৈঠকে উপস্থিত বরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ সইকিয়া ছাড়াও বহু বরিষ্ঠ নেতা অংশ নিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, দলের জাতীয় সম্পাদক এবং সাংসদ কামাখ্যা প্রসাদ তাসা, রাজ্য ভারপ্রাপ্ত হরিশ দ্বিবেদী এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রবীন্দ্র রাজু বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ভবিষ্যতের রণনীতি এবং সাংগঠনিক বিষয়গুলির গভীর পর্যালোচনা করা হয়েছিল।

নির্বাচনী রণনীতির মূল বিষয়গুলি

বিজেপির নির্বাচনী রণনীতিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম বিষয়টি হলো ক্ষমতা-বিরোধী হাওয়া (Anti-Incumbency) বোঝা এবং এটিকে চ্যালেঞ্জ জানানো। দল নিশ্চিত করতে চায় যে পূর্ববর্তী অর্জন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলি জনগণের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আঞ্চলিকতাবাদ (Regional Sentiments) বিবেচনা করে নির্বাচনী বার্তা তৈরি করা। অসমে ভাষা, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান এবং ভূমি অধিকারের মতো স্থানীয় বিষয়গুলি নির্বাচনী রণনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিজেপি এই বিষয়গুলিকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে।

তৃতীয় বিষয়টি হলো সাংগঠনিক শক্তি। দল তাদের কর্মী এবং বুথ-স্তরের নেতাদের সক্রিয় করছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন যে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার।

বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ

বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ, বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছেন। গগৈ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জনসম্পর্ক অভিযান শুরু করেছেন। কংগ্রেসের মূল বার্তা হলো উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের মনোযোগ পরিবর্তনের দিকে ঘোরানো।

Leave a comment