বর্ষায় বাড়ছে সাপের উপদ্রব কামড়ালে কী করবেন কতক্ষণের মধ্যে ইঞ্জেকশন জরুরি

বর্ষায় বাড়ছে সাপের উপদ্রব কামড়ালে কী করবেন কতক্ষণের মধ্যে ইঞ্জেকশন জরুরি

জঙ্গলমহলে বর্ষার আতঙ্ক সাপ

বর্ষা নামলেই জঙ্গলমহলের গ্রামাঞ্চলে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। মাঠ-ঘাট, ঝোপঝাড়, নদীর তীর, রাস্তাঘাট বা বাড়ির আশপাশ—প্রায় কোথাও মানুষ পুরোপুরি নিরাপদ নয়। গ্রামীণ মানুষের জীবিকা মূলত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। বর্ষার সময় ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে গেলে চাষিদের প্রাণের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়ে। প্রতিবছর বহু মানুষ সাপের কামড়ে জীবন হারান। তাই অনেক জায়গায় এখনও নাগদেবতার পূজা করার প্রচলন রয়েছে, যেন সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরও বিভিন্ন সচেতনতা প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে মানুষ সর্তক থাকে এবং প্রথম সাহায্য দ্রুত পায়।

স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ

বর্ষার এই সময়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু রোধ করার জন্য স্বাস্থ্য দফতর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্লক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনম সিরাম (এভিএস) মজুত রাখা হয়েছে। শুধু মজুত নয়, প্রয়োজনে তা দ্রুত প্রয়োজনীয় স্থানে সরবরাহ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরি অবস্থায় সাপের কামড়ের রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে সক্ষম।

কৃষকদের দৈনন্দিন ঝুঁকি ও সতর্কবার্তা

গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজ মূল অর্থনীতির ভিত্তি হওয়ায় চাষিরা প্রায়শই ঝুঁকি নিয়েই মাঠে যান। বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি হয়, তাই আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। তবে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর বারবার মানুষকে ভয় না পেয়ে সচেতন হতে এবং সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। সচেতনতার মাধ্যমে প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ

সাপের কামড়ানো রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মেডিক্যাল অফিসার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামের দহিজুড়ির এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বর্ষার সময় মাঠে যাওয়ার আগে আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক, কারণ প্রচুর সাপ দেখা যায়। দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই প্রশিক্ষণকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সতর্ক করেছেন, কামড়ানো রোগীকে প্রথমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই বাঁচার প্রধান উপায়।

ওঝার কাছে নিয়ে গেলে বিপদ বাড়ে

গ্রামীণ এলাকায় এখনও একটি বড় সমস্যা রয়েছে—সাপে কামড়ালে অনেকেই প্রথমে ওঝার কাছে ছুটে যান। এতে অমূল্য সময় নষ্ট হয় এবং রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, অ্যান্টি ভেনম সিরাম ব্যবহার করা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করার জন্য রোগীকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জরুরি। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মৃত্যু বা স্থায়ী ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

স্কুলছাত্রের প্রাণ রক্ষার উদাহরণ

সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনী ব্লকের বেলদা হাইস্কুলে এক দশম শ্রেণির ছাত্রকে স্কুলে চলাকালীন সাপ কামড়ায়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় ছাত্রটির প্রাণ বাঁচে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সচেতনতা এবং দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোই প্রাণ রক্ষার মূল চাবিকাঠি।

সচেতনতা ও প্রতিরোধই মূল সমাধান

ঝাড়গ্রাম জেলায় বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্য দফতর প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনম সিরাম মজুত আছে, প্রয়োজনে তা দ্রুত প্রেরণ করা হয়। প্রশাসন বারবার মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা দিচ্ছে—ভয় নয়, সচেতনতা জরুরি। সাপের কামড় হলে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং রিপোর্ট দেওয়াই প্রাণ রক্ষার একমাত্র উপায়। আতঙ্ক ছড়ানো নয়, সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতি জীবন বাঁচাতে পারে।

Leave a comment