প্রয়াত বাবার কণ্ঠস্বর AI-এর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনলেন ছেলে, Grief Tech-এর নজির

প্রয়াত বাবার কণ্ঠস্বর AI-এর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনলেন ছেলে, Grief Tech-এর নজির

ব্রাজিলের দিয়েগো ফেলিক্স ডস সান্তোস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সাহায্যে তাঁর প্রয়াত বাবার কণ্ঠস্বর আবার শুনতে পেয়েছেন। Eleven Labs প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তিনি বাবার কণ্ঠস্বর থেকে নতুন বার্তা তৈরি করেছেন, যা তাঁর স্মৃতি এবং কথোপকথনগুলিকে প্রায় বাস্তব অভিজ্ঞতার মতো করে তুলেছে। এই অভিজ্ঞতা Grief Tech প্রবণতার একটি অংশ।

AI এবং Grief Tech: ব্রাজিলের দিয়েগো ফেলিক্স ডস সান্তোস ২০২১ সালের জুলাই মাসে তাঁর প্রয়াত বাবার কণ্ঠস্বর আবার শোনার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্কটল্যান্ডে ফিরে আসার পর তিনি অনুভব করেন যে বাবার কোনো স্মৃতিচিহ্ন অবশিষ্ট নেই, হাসপাতাল থেকে পাঠানো একটি ভয়েস নোট ছাড়া। ডস সান্তোস Eleven Labs নামক একটি AI প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাবার কণ্ঠস্বর থেকে নতুন বার্তা তৈরি করেছেন। এই প্রযুক্তি তাঁকে বাবার স্মৃতিগুলিকে বাস্তব অভিজ্ঞতার মতো অনুভব করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং পরিবারকে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছে।

AI-এর মাধ্যমে স্মৃতিগুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছে

২০২১ সালের জুলাই মাসে ডস সান্তোস Eleven Labs নামক AI প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন, যা ২০২২ সালে শুরু হয়েছিল এবং ভয়েস জেনারেটর টুল হিসেবে কাজ করে। প্রতি মাসে ২২ ডলার ফি দিয়ে তিনি বাবার কণ্ঠস্বর থেকে নতুন বার্তা তৈরি করিয়েছেন। অ্যাপে শোনামাত্র "হাই ছেলে, কেমন আছো?" এবং বাবার ডাকনাম "বসি" (Bossy) -এর মতো শব্দগুলি ভেসে আসে, যা দিয়েগোকে মনে করিয়ে দেয় যে তিনি যেন তাঁর বাবার সাথে সত্যিই কথা বলছেন।

প্রথমদিকে পরিবার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে AI প্রযুক্তিতে আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তারা এটি মেনে নিয়েছে। এখন ডস সান্তোস এবং তাঁর স্ত্রী, যাদের ২০১৩ সালে ক্যান্সারের কথা জানা গিয়েছিল, তারা ভাবছেন যে তারাও তাদের ডিজিটাল ভয়েস ক্লোন তৈরি করাবেন, যাতে ভবিষ্যতে তাদের উপস্থিতি পরিবারের সাথে বজায় থাকে।

Grief Tech

ডস সান্তোসের অভিজ্ঞতা সেই প্রবণতার অংশ, যাকে "Grief Tech" বলা হয়। এই AI প্রযুক্তি প্রিয়জনদের মৃত্যুর পর মানসিক সমর্থন প্রদানের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। আমেরিকার স্টার্টআপ StoryFile এবং HereAfter AI ইতিমধ্যেই এমন টুল সরবরাহ করছে, যা ডিজিটাল পরিচয় বা ভয়েস-ভিত্তিক ইন্টারেক্টিভ অবতার তৈরি করতে পারে।

২০২৪ সালে শুরু হওয়া Eternos কোম্পানিও এই দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট লোকেসিও তাঁর বাবার মৃত্যুর পর AI-ভিত্তিক ডিজিটাল টুইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে ইন্টারেক্টিভ অবতার তৈরি করেছেন। ২৫ ডলার থেকে শুরু হওয়া সাবস্ক্রিপশন পরিকল্পনা পরিবারকে প্রিয়জনের গল্প এবং স্মৃতিগুলিতে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

নৈতিক এবং মানসিক প্রশ্ন

যদিও এই প্রযুক্তি শোক মোকাবিলার এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে, তবে এর সাথে সম্মতি, ডেটা সুরক্ষা এবং বাণিজ্যিক লাভের মতো গুরুতর প্রশ্নও উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই প্রযুক্তি মানসিক সমর্থন প্রদান করে, কিন্তু এটি হয়তো প্রকৃত শোকের প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেওয়ার বা পরিবর্তন করার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Leave a comment