টাটা ট্রাস্টস-এর পরিচালকরা আজ টাটা সন্সের সম্ভাব্য তালিকাভুক্তি (listing) এবং শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের প্রস্থান (exit) নিয়ে আলোচনা করবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য হল বোর্ডরুমের বিবাদ মেটানো, যেখানে ভেটো অধিকারের হ্রাস এবং সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার হস্তক্ষেপ করে মতভেদ দূর করার চেষ্টা করেছে।
Tata sons ipo: দেশের প্রাচীনতম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী টাটা গ্রুপের হোল্ডিং সংস্থা টাটা ট্রাস্টস-এর পরিচালকরা শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। এই বৈঠকটি টাটা সন্সের সম্ভাব্য আইপিও (IPO) এবং সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডার শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের প্রস্থান (exit) নিয়ে। গত কয়েক মাস ধরে ট্রাস্টিদের মধ্যে বোর্ডরুমের বিবাদ তীব্র হয়েছে, যার পর কেন্দ্রীয় সরকার মধ্যস্থতা করেছে। ট্রাস্টিদের আশঙ্কা, টাটা সন্সের তালিকাভুক্তি তাদের ভেটো অধিকারকে দুর্বল করতে পারে এবং পালোনজি গ্রুপের প্রভাব বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, ঋণে ডুবে থাকা পালোনজি গ্রুপ তাদের 18.37% অংশীদারিত্ব বিক্রি করে ঋণ কমাতে চায়, যাতে গ্রুপের উপর আর্থিক চাপ কমে।
সরকারি হস্তক্ষেপের পর ডাকা বৈঠক
বিষয়টির সঙ্গে জড়িতদের মতে, বুধবার সরকারের মধ্যস্থতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পর এই বৈঠকটি নির্ধারিত হয়। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কর্মকর্তারা টাটা ট্রাস্টস এবং টাটা সন্স প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিনিধিদের কাছে মতভেদ দূর করার আবেদন জানিয়েছিলেন। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে গ্রুপের কার্যক্রমে কোনো নেতিবাচক ভাবমূর্তি বা বাধা না পড়ে।
সূত্র অনুযায়ী, বিবাদ তখনই গভীর হয় যখন কিছু ট্রাস্টি প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব বিজয় সিংকে টাটা সন্সের বোর্ড থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পাশাপাশি, অন্য একজন পরিচালক ভেনু শ্রীনিবাসনকে সরানোরও চেষ্টা করা হয়েছিল। দু'জনকেই নোয়েল টাটার ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়, যিনি টাটা ট্রাস্টস-এর চেয়ারম্যান।
ট্রাস্টগুলির অংশীদারিত্ব এবং ক্ষমতা
টাটা ট্রাস্টস-এর টাটা সন্সে প্রায় ৬৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের কারণে ট্রাস্টগুলির কেবল বোর্ডের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়োগের অধিকারই নেই, বরং তারা প্রধান কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলিতে ভেটো অধিকারও রাখে। এই কাঠামোই তাদের গ্রুপের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে একটি বড় ভূমিকা দেয়।
তবে, এখন এই কাঠামোই বিবাদের মূলে পরিণত হয়েছে। ট্রাস্টিদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে মতভেদ গভীর হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাস্টগুলির মধ্যে কোনো গুরুতর ফাটলের প্রভাব সরাসরি টাটা সন্স এবং সমগ্র টাটা গ্রুপের উপর পড়বে। টাটা গ্রুপের ২৬টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, যাদের মোট বার্ষিক আয় ১৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে জানা গেছে।
পালোনজি গ্রুপের অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা
টাটা ট্রাস্টস টাটা সন্সের চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তিনি শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের সাথে আলোচনা শুরু করুন যাতে তাদের অংশীদারিত্বের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ প্রস্থান পরিকল্পনা (exit plan) নির্ধারণ করা যায়। পালোনজি গ্রুপ টাটা সন্সে ১৮.৩৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব রাখে এবং তাদের ক্রমবর্ধমান ঋণ কমাতে এটি বিক্রি করার চেষ্টা করছে।
মহামারীর পর গ্রুপের আর্থিক অবস্থার উপর গভীর প্রভাব পড়েছে। কোম্পানিকে তাদের অবকাঠামো প্রকল্পগুলির ঋণ পরিশোধের জন্য জরুরি তহবিলের প্রয়োজন। এই অংশীদারিত্ব বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ তারা তাদের ঋণের বোঝা কমানোর কাজে লাগাতে চায়।
আরবিআই-এর নতুন নির্দেশিকার দিকে নজর
সূত্র অনুযায়ী, টাটা সন্স বর্তমানে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) নতুন নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে, বছরের শেষ নাগাদ আরবিআই এমন নিয়ম জারি করতে পারে, যা হোল্ডিং কোম্পানিগুলিকে বাধ্যতামূলক পাবলিক ইস্যু থেকে স্বস্তি দিতে পারে। যদি এমনটা হয়, তাহলে টাটা সন্সকে আইপিও আনার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবে না।
তবে, এই বিলম্ব পালোনজি গ্রুপের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। কারণ গ্রুপ তাদের অংশীদারিত্ব দ্রুত monetise (নগদে রূপান্তর) করতে চায় যাতে আর্থিক চাপ কমানো যায়।
কয়েকটি বিকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা
শাপুরজি পালোনজি গ্রুপ তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রির জন্য কয়েকটি বিকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। এর মধ্যে রয়েছে টাটা সন্সের দ্বারা সরাসরি শেয়ার বাইব্যাক, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে আংশিক অংশীদারিত্ব বিক্রি, অথবা কৌশলগত অংশীদারিত্ব (strategic partnership)।
ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পালোনজি গ্রুপ তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্ভাব্য অর্থ অবকাঠামো ইউনিটের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে তাদের ঋণ গ্রহণ খরচ কমবে এবং গ্রুপের ক্রেডিট রেটিং-এর উন্নতি হতে পারে।
বৈঠক থেকে বড় আশা
টাটা ট্রাস্টস-এর আজকের বৈঠক থেকে আশা করা হচ্ছে যে, টাটা গ্রুপের মধ্যে চলমান মতভেদ দূর করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই বৈঠকটি আগামী মাসগুলিতে টাটা সন্সের তালিকাভুক্তি, ট্রাস্টগুলির ভূমিকা এবং পালোনজি গ্রুপের প্রস্থান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
সব মিলিয়ে, টাটা সন্সের আইপিও এবং অংশীদারিত্ব বিবাদের প্রভাব কেবল গ্রুপের ভবিষ্যৎই নয়, ভারতীয় কর্পোরেট জগতের কাঠামোতেও পড়তে পারে।